নওগাঁয় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফরের মায়ের আকুতি

এনবিএন ডেক্সঃ  নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গাঞ্জাকুড়ী গ্রামের শহীদ জননী আছিয়া বেওয়া (৮০) স্বাধীনতার যুদ্ধে তার জ্যেষ্ঠপুত্র লুৎফর রহমানকে হারিয়ে শুধু তার স্মৃতি টুকু বুকে আঁকড়ে ধরে ফিরে আসার পথ পানে চেয়ে বেঁচে আছেন। শহীদ জননী আছিয়া বেওয়া তার বীর মুক্তি যোদ্ধা সন্তানকে হারিয়ে বিনিময়ে সরকারি ভাবে কিছু আর্থিক সহযোগীতা তার ভাগ্যে জুটলেও  মনের চাওয়া পাওয়ার খোজখবর নিতে আজও কেউ তার পাশে সেই শহীদ বীর সন-ানের মতো করে কেউ কাছে আসেনি। সমপ্রতি সাপাহার উপজেলায় কর্মরত স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার কয়েকজন সাংবাদিক সরজমিনে খোঁজ খবর নিতে শহীদ জননী আছিয়া বেওয়ার বাড়ীতে  গেলে সাংবাদিকদের আগমনে  তিনি কেঁদে উঠেন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তিনি বলেন, সাপাহার এলাকায় যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার গ্রামের কিছু ও পাশের টেংরাকুড়ী গ্রামের রাজাকারদের দখলে ছিল পুরো গাঞ্জাকুড়ী গ্রাম। ওই গ্রামের কয়েকজন যুবক সে সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষন নেওয়ায় স’ানীয় রাজাকার আলবদর ও পাকবাহীনির নজরে আসে গ্রামটি। এমতাবস’ায়  দশম শ্রেনীর ছাত্র ওই গ্রামের নজিমুদ্দীনের যুবক পুত্র লুৎফর রহমান স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে ধারন করে পাক হানাদারদের রুখতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। এ সময় তিনি এলাকার বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। সর্বশেষ ‘৭১ ,এর ১৩ই  সেপ্টেম্বর রাতে সাপাহারে এক যুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য তিনি মা বাবার নিকট শেষ দোয়া নিয়ে বাড়ী হতে  বিদায় নেন। শহীদ বীর পুত্রের কথা বলতে বলতে আছিয়া বেওয়া  দু-চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, সেদিন তিনি কিছুতেই তার ছেলেকে যুদ্ধে যেতে দিতে চাননি। মা-বাবা, আত্বীয় স্বজনদের হাজারো নিষেধ উপেক্ষা করে সে যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তার মনের জোর ছিল জীবন দিয়ে হলেও তিনি সাপাহার সদরে অবসি’ত পাকহানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ক্যাম্পটিকে উৎখাত করে মায়ের নিকট ফিরে আসবে। কিন’ ভাগ্য বড়ই নিষ্ঠুর, মা-সন-ানের মনের এ আশা সেদিন পুরন হয়নি। দেশদ্রোহী রাজাকার আলবদর মারফত মুক্তিযোদ্ধাদের ওই যুদ্ধের প্রস’তির সব কথা পৌছে যায় পাকসেনার শিবিরে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে ভোরের দিকে শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ। সেদিনের যুদ্ধে শত্রুর গুলির আঘাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান সহ নাম না জানা অনেকে বীর সেনা শহীদ হন। বৃদ্ধা আছিয়া বেওয়া  বর্তমানে একজন শহীদ জননী হিসেবে সরকারের  পক্ষ থেকে ভাতা পেয়ে থাকেন। তার মতে দেশের যে সকল বীর  সন্তানেরা তার মতো হাজার ও  মায়ের বুক খালি করে দেশের জন্য প্রান উৎসর্গ করে স্বপ্নের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন বিগত ৪০ বছরেও স্বাধীনতার সেই প্রকৃত সপ্ন পূরন হয়নি। আজও এ বাংলার মাটিতে দেশদ্রোহী রাজাকার আল বদর ও পাকসেনার দোসররা মাথা উচু করে বসবাস করছে। এখনও সেই রাজাকার আলবদরের দল বহাল তবিয়তে । যারা যুদ্ধের সময়  এদেশের শানি- প্রিয় মানুষের চোখের ঘুম হারাম করে বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ লুটপাট করেছিল তারা এখন ও তার চোখের  সামনে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছে। শহীদ জননী জানান, এখনও তিনি ঘুমের ঘোরে  আদরের সন্তান লুৎফরকে দেখতে পান তখন তার মনে হয় আবার তার বীর  সন্তান তার ঘরের দুয়ারে এসে কড়া নেড়ে মা মা বলে ডাকবেন। কিন’ বাস-বে তা আর কুন দিন সম্ভব নয়। তাই জীবনের শেষ মূহুর্তে এসে তিনি ওই সব দেশদ্রোহী রাজাকার মানবতা বিরোধীদের  বিচার দেখে মরতে চান। সেই সাথে শহীদ জননী আছিয়া বেওয়া আক্ষেপ করে বলেন, তার বীর সন-ান এদেশ তথা এই সাপাহার বাসীর জন্য শহীদ হলেও সরকারী বা স্থানীয় ভাবে  আজও তার নামে কোন প্রতিষ্ঠানের নাম করন করা হয়নি। আজও তার নামে সাপাহারের মাটিতে নির্মান হয়নি কোন স্মৃতি    স্মম্ভ।  তিনি জীবনের শেষ মুহুর্তে  শহীদ সন্তানের নামে সাপাহারের মাটিতে একটি নাম ফলক (স্মৃতি স-ম্ভ ) দেখে মরতে চান। এ জন্য তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মতাদের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন