এনবিএন ডেস্ক: নওগাঁর ধামুরহাট উপজেলায় অবসি’ত প্রত্নখ্যাত মাহি সনেত্মাষ বারো দুয়ারী মসজিদ এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ সামগ্রীর শীলা খণ্ড চুরি হয়ে যাচ্ছে। অতি সমপ্রতি জয়পুরহাট বিজিবি-৩ এ এলাকা থেকে বেশ কিছু শীলা খণ্ড তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার সময়ে এলাকার সংসদ সদস্য ( নওগাঁ-২) শহীদুজ্জামান সরকার পথ অবরোধ সৃষ্টি করে বিজিবি সদস্যদের শীলা খণ্ড নিয়ে যেতে বাঁধা দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার সরজমিন ধামুরহাট উপজেলার মাহী সনেত্মাষ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে এ সকল প্রত্ন সম্পদ চুরি হচ্ছিল। মাহী সনেত্মাষের পার্র্শ্ববর্তি গ্রাম বসত্মাবর, জোত ওসমান, বীরগ্রাম, চককালু, সিলিমপুর ও শেখাহাটি ঘুরে দেখা যায় গ্রামের বিভিন্ন পুকুরে ঘাটের অংশ হিসাবে এবং বাসা-বাড়িতে সিরির অংশ হিসাবে অনেকেই মাহী সনেত্মাষ বারো দুয়ারী মসজিদ এলাকা থেকে বিভিন্ন মাপের ওই সকল নির্মাণ শীলা ব্যবহার করছে।
এলাকাবাসী জানায় ঐতিহাসিক মাহী সনেত্মাষ বারো দুয়ারী মসজিদ প্রাঙ্গণে তিন থেকে চার একর এলাকা জুরে এসকল শিলাখন্ড ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে। এখান থেকে বাপ-দাদারা এসকল ‘ পাথর এনে কাজে ব্যবহার করে আসছে। এ সকল শীলা খণ্ড যে প্রত্ন সম্পদ এবং তা সাধারণের ব্যবহার নিষেধ তা ব্যবহার কারীরা জানেনা। তবে অনেকেই দাবি করেছে কাজে ব্যবহারের সময়ে কিছু অলৌকিক গুণাবলী দেখে ব্যবহারকারীর অনেকেই বেশ কিছু শিলা খণ্ড মসজিদ প্রাঙ্গণে ফেরত রেখে এসেছেন।
প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অঞ্চলিক পরিচালক বদরুল আলম জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি এ এলাকায় এসে মাহী সনেত্মাষ এলাকা ঘুরে দেখার সময় বারো দুয়ারী মসজিদের অদূরে দু সতীনা খালের পশ্চিম পাড়ে কারুকার্য খচিত একটি লম্বা ও চারকোনা বিশিষ্ট সত্মম্ভের অংশ বিশেষ পড়ে থাকতে দেখে তিনি স’ানীয় বসত্মাবর সীমানত্ম ফাঁরীর কমান্ডার সুবেদার শহীদুল ইসলামকে ওই শিলা খন্ডটি পাহাড়া দিয়ে রাখতে বলেন। এরপর তিনি বারো দুয়ারী মসজিদ প্রাঙ্গণে এসে পরীক্ষা করে দেখেন এখানে ১৩শ শতক থেকে ১৫ শতকের বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর অংশ পড়ে আছে। তিনি মনত্মব্য করে বলেন তিন শতকের এসকল শীলা খন্ডে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম আমলের স’াপত্য কৌশল লক্ষকরা গেছে যা দেশের অন্য কোন প্রত্ন এলাকায় লক্ষ করা যায় না। তিনি এলাকাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তার কর্মস’ল বগুড়ায় ফিরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা শুরু করেন। এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর জয়পুর হাট বিজিবি-৩ এর সিও লে. কর্নেল মেহেদী হাসান বসত্মাবর সীমানত্ম ফাঁরি পরিদর্শনে এসে দু সতীনা খালের শীলা সত্মম্ভের খবর জেনে ঘটনাস’লে যান এবং সেখানে থাকা কারুকার্য খচিত ওই শীলা সত্মম্ভটি জয়পুর হাট বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান।
এরপর গত ২ অক্টোবর দুপুরে তিনি নিজে জয়পুর হাট থেকে দিনমজুর ও ভাড়া করা ট্রাক্টর নিয়ে এসে বারো দুয়ারী মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে রাতের আধারে আবারো ৬টি বড় বড় শীলা খণ্ড নিয়ে যান। পরদিন আবারো একই ভাবে জয়পুর হাটে থেকে ট্রক্টর সহ দিন মজুর এসে স’ানীয় বসত্মাবর সীমানত্ম ফাঁরির ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে সকালে ১৫ টি শীলা খণ্ড সকাল ১০টার দিকে জয়পুর হাট পাঠিয়ে দেন ও অপর একটি ট্রাক্টরে দুপুরে আরো ১৪টি শীলা খণ্ড পাঠানোর সময় স’ানীয় জনগণ তাদের সংসদ সদস্যকে জানালে সংসদ সদস্য জনগণকে সাথে নিয়ে পথ অবরোধ করে বাঁধা সৃষ্টি করায় বিজিবি সদস্যরা ওই ১৪টি শীলাখন্ড নিয়ে যেতে না পেরে তা বারোদুয়ারী মসজিদ প্রাঙ্গণে ফেরত রেখে যেতে বাঁধ্য হন।
এ সময় স’ানীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার বিজির নিয়ে যাওয়া শীলা খন্ডগুলো ফেরতের দাবি জানালে বিষয়টি নিয়ে আলোরণ সৃষ্টি হয়। এ কারণে ওই দিন সন্ধ্যায় নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মোসাম্মদ নাজমানারা খানুম, পুলিশ সুপার বেলালুর রহমান সহ ধামুরহাট উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তার ঘটনাস’ল পরিদর্শন শেষে বিজিবির নিয়ে যাওয়া শীলাখন্ড ফেরতের দাবি জানালেও গত মঙ্গলবার সকাল পর্যনত্ম বিজিবি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহনে বিরত থাকে। এদিকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খবর পেয়ে প্রনত্মতত্ব বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুল খালেক অবিলম্বে শীলাখন্ডগুরো ফেরতের দাবি জানিয়ে বিজিবিকে চিঠি পাঠালে গত বুধবার বিজিবি জয়পুর হাট-৩ থেকে বেশ কিছু শীলা খণ্ড ফেরত পাঠানো হয়েছে। স’ানীয় জনগণের দাবি রাতের আধারে বিজিবির সদস্যরা আরো অনেক শীরা খণ্ড নিয়ে গেছে কিন’ যে টুকু স’ানীয় জনগণ যে টুকুর কথা জানতে পেরেছে বিজিবি শুধু সেই টুকুই ফেরত পাঠিয়েছে।
এ সংক্রানত্ম বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাটের ৩ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে: কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, সমপ্রতি জয়পুরহাট বিজিবির একটি টহলদল ওই এলাকা থেকে একটি কষ্টি পাথর উদ্ধার করে আনে এবং ওই এলাকায় আরো মূল্যবান পাথর পড়ে থাকার দাবি করে। বিষয়টি জানার পরে আমি একদিন মাহিসনেত্মাষ গ্রাম এলাকায় এলাকায় যাই এবং সেখানে এলোমেলো ভাবে বহু মূল্যবান পাথর পড়ে থাকতে দেখি। বিষয়টি সর্ম্পকে আমি বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই এবং ঘটনাস’ল থেকে ভারতের বিভিন্ন সীমানত্ম গ্রামের দূরত্ব খুবই কম হওয়ায় মূল্যবান পাথরগুলো চুরি হয়ে যাওয়ার আশংকা করি। পরে আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের তাগিদ থেকে প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব্ব সম্পদ রক্ষা করার মানষে সেগুলি উদ্ধার করে আমার দপ্তরে সংরক্ষণ করি। এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি অধিনায়ক বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পাথরগুলো প্রত্নতত্ত্ব্ব অধিদপ্তরে হসত্মানত্মরের উদ্দেশ্য নিয়েই সেগুলো স্থানান্তর করা হয়, অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে নয়।
Home / প্রতিবেদন / নওগাঁর ধামুরহাটের মাহিসনেত্মাষ থেকে বিজিবির শীলা সত্মম্ভ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তুলকাম
আরও পড়ুন...
বে-সরকারী সংস্থার উদ্যোগে নওগাঁয় স্বামী কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সম্পা এখন সুস্থ্য
এনবিএন ডেক্স : স্বামী কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সম্পাকে দীর্ঘদিন ঢাকায় বার্ণ হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ্য …