এনবিএন ডেক্স: ভাদ্রের শেষ চলছে আশ্বিন মাস। রাত কিম্বা দিনে ধুপধাপ কিম্বা ধপাস শব্দ! শিশুরা দৌড়ে চলে যায় ঘরের বাইরে। তারপর বিজয়ের হাসি নিয়ে হাতে তাল নিয়ে ফিরে আসে ঘরে। খুব যত্নে তালটি তুলে দেয় মায়ের হাতে। মা তাল নিয়ে সনত্মানকে খুশি করতে আয়োজন করে বিভিন্ন পদের পিঠা তৈরির। সনত্মান বসে থাকে চুলোর পাড়ে অধীর অপেক্ষায় কখন তৈরি হবে সুস্বাদু পিঠা। বাংলার গ্রামে গ্রামে ভাদ্র মাসে এ দৃশ্য চিরনত্মন। বার মাসে তের পার্বনের বাংলাদেশে সব সময়ই পাওয়া যায় বিভিন্ন ফল। ভাদ্র মাসে অন্য যে কোন ফলের চাইতে সব চেয়ে সুস্বাদু ও লোভনীয় ফল তাল। তাই এখন পাড়ায় মহল্লায় চলছে তাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদের পিঠা-পুলির উৎসব। আর এ কাজে ব্যসত্ম সময় কাটাচ্ছেন বাড়ির গৃহকর্তী সহ বৌ ঝিরা। আর এর আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে শিশুদের সহ জামাই-ঝিঁদের বাড়িতেও। তাল নিয়ে এক আলাপ চারিতায় নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুরের দামপুরা গ্রামের ষাটোর্ধ প্রবীণ ব্যক্তি তাবজুল জানান তাল কেন্দ্রিক তার অতীত কিছু মধুর অভিজ্ঞতার কথা। তার বয়স তখন ২৫/৩০হবে হয়তো। পাড়ার ছেলেদের নিয়ে দিন-ক্ষণ ঠিক করে দূরের কোন তাল বাগানে যেতেন তাল কুড়াতে। সেখানে তাবু খাটিয়ে হাঁস-মুরগি যবাই করে পালা ক্রমে জেগে সারা রাত চলতো তাল কুড়ানো। ওই বাগানে অন্য কোন দল থাকলে বেধে যেত দ্বন্দ্ব। চলতো ক্ষমতার লড়াই। এতকিছুর পরও বসত্মা ভর্তি পাকা তাল নিয়ে ফিরতো বাড়ি। অপেক্ষায় থাকতো বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ও গৃহবধূরা। সে তালের পিঠা তৈরিতে ডাক পড়তো পাড়ার মুরুব্বী নানী ও দাদীদের। চলতো বাড়িতে দিনভর তালের তৈরি বিভিন্ন পদের পিঠা তৈরির উৎসব। সে পিঠা পাঠানো হতো আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। যেত ভার ভর্তি “সাজন” এর পিঠা জামাই বাড়িতে। এ ছিল বাঁধ্যতামূলক আচার- অনুষ্ঠান। তাল গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় এমন দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে তালের পিঠা বা তাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার বানানোর আয়োজন এখনো চোখে পড়ে নওগাঁর নিয়ামতপুরের বিভিন্ন গ্রামে।
বাংলাদেশের ভূ-খন্ড থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে তাল গাছ। অথচ নেই সংরক্ষণের সরকারি কোন উদ্যোগ। আর ভিক্ষা করে রাসত্মার পাশে তাল গাছ রোপণ করায় নওগাঁর প্রয়াত গহের আলিতো রীতিমতো পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। গহের আলি নওগাঁয় একা নয়। এ ধরনের গহের আলি আছে নওগাঁয় প্রচুর। তারা বিভিন্ন পুকুর পাড়ে কিম্বা সড়কের ধারে স্ব উদ্যোগে হাজার হাজার তাল গাছ লাগিয়ে চলেছেন। আমাদের উচিত তাদের উদ্যোদকে জাগিয়ে রাখা। ২০-২৫ বছর আগে গ্রাম অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই থাকতো তাল গাছ। আর দূর থেকে তাল গাছের ধরন দেখিয়ে মানুষ জন অন্যের বাড়ি চিনেয়ে দিতো আগনত্মকদের।
তাল গাছ শুধু ফলের জন্যেই বিখ্যাত নয়। তালগাছের তক্তা খুব মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে ঘরের খুঁটি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার আজও প্রচলন আছে। আর গরমে তাল পাখার কোন বিকল্প বেমানান গ্রামাঞ্চলে। এ ছাড়া তালগাছের রসও খুব সুমিষ্ট, পুষ্টিদায়ক এবং ওষুধী গুন সম্পূন্ন। অবশ্য অনেকে তালের রস পচিয়ে নেশাজাত দ্রব্য তৈরি করে ব্যবহারও করে থাকেন। যে যে কাজেই তাল গাছ ব্যবহার করুক না কেন ভাদ্রের তালের বিভিন্ন পিঠা কিম্বা তালের রস না হলে বাংলার ঘরে ঘরে আনন্দই মাটি হয়ে যায়।#
আরও পড়ুন...
বে-সরকারী সংস্থার উদ্যোগে নওগাঁয় স্বামী কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সম্পা এখন সুস্থ্য
এনবিএন ডেক্স : স্বামী কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সম্পাকে দীর্ঘদিন ঢাকায় বার্ণ হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ্য …