7 Kartrik 1431 বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / জাতীয় সংবাদ / রক্ষাক্ত জনপদ নওগাঁয় নতুন করে আতংক শায়খ ও বাংলা ভাইয়ের ১০ লাখ কর্মী আজও ধরা ছোয়ার বাইরে

রক্ষাক্ত জনপদ নওগাঁয় নতুন করে আতংক শায়খ ও বাংলা ভাইয়ের ১০ লাখ কর্মী আজও ধরা ছোয়ার বাইরে

এনবিএন ডেক্স: নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি হলেও দেশের বিভিন্ন স’ানে এখনও বন্ধ হয়নি জঙ্গি তৎপরতা। শায়খ ও বাংলা ভাইয়ের সেই ১০ লাখ কর্মী আজও ধরা পড়েনি। নওগাঁর আত্রাই-রানীনগর উপজেলায় জেএমবির সদস্যরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জেএমবির তালিকা নিয়ে র‌্যাব-পুলিশ ঘুরলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কারণেই তারা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এ কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর নওগাঁর আত্রাইয়ে পুলিশ সাড়াশী অভিযান চালিয়ে জেএমবির ৭ শীর্ষ ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে। ২৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার বাকা গ্রামের পার্শ্বের একটি জলাশয় থেকে মস-ক বিহীন লাশ উদ্ধার, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পাওয়া যাচ্ছে কাফনের কাপড়, রানীনগর উপজেলার ভাটকৈ বাজারের একটি পুকুর থেকে দুটি পা উদ্ধার, ২৫ সেপ্টেম্বর নওগাঁ জেলখানার সামনে থেকে ব্য্রাক ব্যাংক কর্মকর্তা ইমরানের লাশ উদ্ধার, ৭ অক্টোবর নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী রাজবাড়ীর পাশে আখ ক্ষেত থেকে মোটর সাইকেল মেকার আল আমিন ও মান্দা উপজেলার সতীহাট থেকে সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা সহ সব মিলিয়ে এ মাসে শুধু নওগাঁতেই ৯ টি খুন সংঘটিত হয়েছে।
৪ বছর আগে শায়খ ও বাংলাভাই এই দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতাসহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হলেও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) নেতা বাংলাভাই তখন শুধু আলোচনার ঝড়ই   তোলেননি বার বার পত্র পত্রিকার শিরোণামও হয়েছেন। তাকে ঘিরে নানা জনে নানা প্রশ্ন  ছিল। সাধারণ মানুষের ওই প্রশ্নগুলির উত্তর জানতে এই প্রতিবেদক সহ কয়েকজন সাংবাদিক ২০০৪ সালের ৩ মে তার সঙ্গে এক নিভৃত পল্ল্ল্লীতে কথা বলেছেন। নওগাঁ থেকে ৬০ কিঃ মিটার দুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা গ্রামে বাংলাভাইয়ের অফিসে বসে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, দেশের সশস্ত্র ইসলামী বিপ্লবের জন্য তাদের সংগঠনে রয়েছে ১০ লাখ কর্মী। এর মধ্যে দেড় লাখ কর্মী নিয়মিত বেতন ভূক্ত। সাড়ে ৩ লাখ দলের জন্য খন্ডকালীন কাজ করে, আর ৫ লাখ রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক। এহসার (পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা আত্নোৎসর্গকারী) এবং গায়েবী এহসার বা দলের জন্য আত্নউৎসর্গ কারীদের কাজের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, এরা প্রয়োজনে নিজের জীবন দিতে প্রস’ত বলেই সংগঠন এদের পরিবারের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। এসময় তিনি নিজেকে জেএমজেবির অপারেশন কমান্ডার দাবী করে বলেছিলেন, তাঁর দলের প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান। তাদের মুল সংগঠনের নাম জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
২০০৪ সালের ২০ মে রানীনগর উপজেলার ভেটি গ্রামে সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসায় তাদের ক্যাম্পে শায়খ আব্দুর রহমান নিজেকে সৌদি আরবের বাংলাদেশ মিশনের একজন সাবেক কর্মী দাবী করেছিলেন। বিপ্লবের জন্য তারা দেশ বিদেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করছেন। তাদের অস্ত্রের উৎস হবে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী বলে তখন তিনি উল্লেখ করেছিলেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, তার কর্মীরা পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর উপর হামলা করে  সংগ্রহ করবে অস্ত্র  আর ইসলামী বিপ্ল্লবে বিশ্বাসী দেশ বিদেশে এমন সংগঠন গুলো অর্থের জোগান দিবে। এসময় বাংলাভাই উপসি’ত ছিলেন। কথাগুলো বলতে বলতে তিনি সাংবাদিকদের এই আন্দোলনের সঙ্গে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম কায়েমের জন্য সশস্ত্র ইসলামী বিপ্ল্লবের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থার বিকল্প নয়-একথা উল্ল্লেখ করে শায়খ আব্দুর রহমান বলেছিলেন, দেশে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাও ইসলাম পরিপনি’।
তবে সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে ২০০৪ সালে ১ এপ্রিলে সশস্ত্র ইসলামী বিল্পবে বিশ্বাসী জেএমজেবির কর্মীরা প্রকাশ্যে সর্বহারা নিধনের নামে একের পর এক হত্যাকান্ড, লুটপাট ও চাঁদাবাজি শুরু করলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে ১৯৯৮ সালে।
বাংলাভাই জোট সরকারের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও কয়েকজন এমপির সহযোগিতার কথা উল্ল্লেখ করে বলেছিলেন, উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী-নাটোর-নওগাঁ জেলায় সর্বহারা নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তিনি সর্বহারা নিধনে প্রশাসনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে আরও বলেছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের তৎকালীন উপ-মহাপরিচালক (ডিআইজি) সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ মিয়া, নাটোরের এসপি নজরুল ইসলাম এবং নওগাঁর এসপি ফজলুর রহমান সরাসরি তাদের সহযোগিতা করে চলেছেন।
সূত্র মতে, সর্বহারা নিধন অভিযানে জোট সরকারের যেসব মন্ত্রীরা রয়েছেন বলে  অভিযোগ আছে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন মন্ত্রী, এক উপমন্ত্রী ও কয়েকজন এমপি। এরা কিভাবে জেএমবি বা বাংলাভাইকে সহযোগিতা করছেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বাংলাভাই বলেছিলেন, এরা সবাই জড়িত আছে কিনা বলা যাবেনা। তবে সংগঠনের একজন আঞ্চলিক কমান্ডার বলে ফেলেন, ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল রাজশাহী অঞ্চলের একজন উপমন্ত্রীর বাড়ীতে বাংলাভাই বৈঠক করেছেন এবং নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার ও ফাঁসির পরও জেএমবির কার্যক্রম আজও থেমে নেই। লুকিয়ে থাকা জঙ্গি সদস্যরা সমপ্রতি নতুন করে জেএমবিকে সুসংগঠিত করছে বলে সুত্রে জানা গেছে। সংগঠনের আগের কাঠামো বজায় রেখে নতুন করে গঠিত হয়েছে ৭ সদস্যের মজলিসে সুরা। সংগঠনের সদস্যদের গোপন সভায় নয়া আমীর নির্বাচিত করেছেন। নিষিদ্ধ ইসলামী জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) মুলত একই সংগঠন। এ দুটি সংগঠনে ১০ লাখ সদস্যের সশস্ত্র তৎপরতায় ২০০৫ থেকে বিভিন্ন সময়ে খুন হয়েছে ৮০ জন। জন্মের পর থেকে এ সংগঠন দুটি প্রায় দুই শতাধিক হত্যাকান্ড সংঘঠিত করেছে বলে সুত্র দাবি করে। এ ছাড়া তাদের হাতে মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
সুত্র জানায়, আটক না হওয়া জঙ্গিরা বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়ে ভেঙ্গে যাওয়া চেইন অব কমান্ডকে পুন:র্গঠিত করার প্রচেষ্টা  অব্যাহত রেখেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জঙ্গী বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিন নওগাঁর বিভিন্ন স’ানে সাড়াশী অভিযান চালিয়ে ৭ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার পরও রহস্যজনক কারণে পুলিশ বাংলা ভাইয়ের সেকেন্ড-ইন কমান্ড হেমায়েত হোসেন হিমুকে ছেড়ে দেয়। এতে করে প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে জনমনে। এছাড়াও বাংলা ভাইয়ের আর এক সেকেন্ড ইন কমান্ড ও আত্রাই-রানীনগর উপজেলার জঙ্গীদের দ্বারা বহু ঘটনার নায়ক আবুল হোসেন মাষ্টার, নজরুল ইসলাম এবং রানীনগর উপজেলার ভেটি ক্যাম্পের ইনচার্জ শরীয়তুল্যাহ সীমার, জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আবুল কালাম আজাদসহ অর্ধ শতাধিক জেএমবি সদস্যরা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে। স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের গাড়ীতে চড়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ-র‌্যাব তাদের টিকিটিও পর্যন্ত ছুতে পারছে না বলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক কাটছে না।

আরও পড়ুন...

নওগাঁর নিয়ামতপুরে সমতল আদিবাসীদের মিলন মেলায় ঐতিহ্যবাহী সাঁওতালী নৃত্য প্রতিযোগিতায় আদিবাসীরা মানুষ হয়েছে, আদিবাসীরা পুরোপুরি মানুষ না হলেও বারো আনা মানুষ হয়েছে ————————————–খাদ্যমন্ত্রী

এন বিএন ডেক্সঃ  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অর্থাৎ আদিবাসীরা মানুষ হয়েছে, তবে পুরোপুরি মানুষ না হলেও বারো …