7 Kartrik 1431 বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / জাতীয় সংবাদ / তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে

তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে

এনবিএন ডেক্স:  ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় ফলে নদী তীরবর্তী অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ব্যারেজ এলাকায় পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট:
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের তিস্তা, সানিয়াজান, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সতী নদীর পানি গতকাল সোমবার সকাল থেকে বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থার ফলে দেশের সর্ব বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ’র অধিকাংশ গেট খুলে দেয়া হয়। এতে আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম ছিটমহলসহ গোটা জেলার ১৫ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা দোয়ানী-ডালিয়া শাখা’র সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, ভারত থেকে প্রচন্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসায় বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরফলে ব্যারাজের উজান ও ভাটিতে অসংখ্য গ্রামের মানুষজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতির মুখে ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। তিনি এ প্রসংগে আরও জানান, ভারতে বন্যা দেখা দিয়েছে। যে কারণে যে কোন মুহূর্তে তিস্তা’র পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জেলার পাটগ্রাম উপজেলার আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম ছিটমহল, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১৫টি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে তিস্তা ব্যরাজের ভাটিতে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্র্দুনা, পাটিকাপাড়া, সিঙ্গিমারী ও ডাউয়াবাড়ী ৪টি ইউনিয়নে।
এদিকে পানি বন্দি লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার মধ্য রাত থেকেই তারা পানি বন্দি হয়ে পড়ে। যা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের জানানো হলেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত তাদের মাঝে কোন খাবার বা ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তিনি বন্যা পরিস্থিতি’র খোঁজ খবর নেয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য ত্রাণের জন্য উচ্চ পর্য়ায়ে যোগাযোগ চলছে।
নীলফামারী ও ডিমলা : গত রোববার গভীর রাত থেকে বাড়তে থাকা পানি গতকাল সকাল ছয়টায় ডালিয়া পয়েন্ট বিপদসীমা ছাপিয়ে ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে দুপুরে কিছুটা কমতে থাকে। ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ব্যারাজ কতৃপক্ষ। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অন্তত ১৫ টি গ্রামের দুই সহশ্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাষ কেন্দ্র জানিয়েছে, রোববার গভীর রাত থেকে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি। গতকাল সকাল ছয়টায় ডালি সকাল নয়টায় আট সেন্টিমিটার কমে ১৬ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় আরো ছয় সেন্টিমিটার কমে ১০ সেন্টিমিটার এবং বিকেল তিনটায় আরো পাঁচ সেন্টিমিটার কমে ৫২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার ওপড় দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ডিমলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের ৫নং ওয়াডের পশ্চিম বাইশপুকুর গ্রাম পাবিত হওয়ায় ওই গ্রামের ৪০টি পরিবার, রাস্তাঘাট, ফসলী জমি কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি ও গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার শৌলমারি ও ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম হাঁটুপানিত তলিয়ে রয়েছে। পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, তার ইউনিয়নের ঝাড়শিঙ্গেশ্বর চরের কাছ দিয়ে তিস্তার আরেকটি চ্যানেল তৈরি হয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেখানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে ওই চরের ৪টি পরিবারের ভিটাবাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে ও ১০টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
খালিশাচাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল হক জানান, ইউনিয়নের পশ্চিম বাইশপুকুর ও পূর্ববাইশ পুকুর গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় অন্তত দুই শত পরিবার কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। তবে পরিবারগুলোকে সরিয়ে বামতীর বাধে ওপর নিরাপদে রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, সকাল ছয়টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে বিকেল তিনটা নাগাদ তা কমে বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে নদের তীরবর্তি ও চরাঞ্চলের চিনা কাউন আবাদ তলিয়ে যাচ্ছে। এতে কুড়িগ্রামের রৌমারী, চিলমারী ও রাজীবপুর উপজেলার অধীনে প্রায় অর্ধশত চর জনপদের ১ হাজার একর চিনা ও কাউনের আবাদ পানিতে ডুবে গেছে। এ অবস্থায় কোনো উপায় না পেয়ে কৃষক বাধ্য হয়ে কাচা ও আধাপাকা চিনা কাউন কাটছে। নদের তীরবর্তী দোলা নিচু এলাকায় এ বছর প্রায় হাজারের ওপর চিনা ও কাউন চাষ হয়েছে। এতে কৃষক তাদের চিনা কাউন নিয়ে খুশিতে স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত কয়েকদিনে নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ডুবে গেছে। রৌমারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানান, এবছর চরে খুবই ভালো চিনা কাউনের চাষ হয়েছে। কিন্তু নদের পানি বৃদ্ধির ফলে তা ডুবে যাচ্ছে। পানি দ্রুত না নামলে চিনা কাউনের ফলন নিয়ে আশংকা তো রয়েছেই।

আরও পড়ুন...

নওগাঁর নিয়ামতপুরে সমতল আদিবাসীদের মিলন মেলায় ঐতিহ্যবাহী সাঁওতালী নৃত্য প্রতিযোগিতায় আদিবাসীরা মানুষ হয়েছে, আদিবাসীরা পুরোপুরি মানুষ না হলেও বারো আনা মানুষ হয়েছে ————————————–খাদ্যমন্ত্রী

এন বিএন ডেক্সঃ  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অর্থাৎ আদিবাসীরা মানুষ হয়েছে, তবে পুরোপুরি মানুষ না হলেও বারো …