17 Magh 1431 বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / বিনোদন / আম-কাঁঠালের ঝগড়া

আম-কাঁঠালের ঝগড়া

এনবিএন ডেক্স : জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি। পাশাপাশি গাছে আম এবং কাঁঠাল খোশ গল্পে মেতে উঠেছে। দু’জনেরই পাকা পাকা অবস্থা। কাঁঠাল ঘ্রাণ ছেড়ে দিয়েছে আর আম রং ছড়িয়েছে। মৃদু বাতাসে আম দুলে দুলে কথা বলছে। ওদিকে কাঁঠাল নিজ জায়গায় বসেই কথা বলছে। খোশ গল্পের মাঝে হঠাৎ তর্ক বেধে গেল দু’জনের মাঝে-” কে বড় নিয়ে”।
আম বলছে আমি ফলের রাজা। দেখেছ আমার রং? কী দারুন আভা ছড়িয়েছি! সবাই আমাকে দেখে আর স্বাদ নেবার জন্য আশায় আশায় থাকে।
কাঁঠাল ফোস করে উঠে বলে-নাক দিয়ে শুকে দেখ আমার ঘ্রাণ। সবাই নাকে টের পেয়ে আমায় খোঁজাখুঁজি করে কোথায় পেকে রয়েছি। এমন কী আমাকে জাতীয় ফল ঘোষণা করেছে?
আম বলল-শোন, আমার গাছও তো জাতীয় গাছ। হাসি ভাব এনে ঢেকুর তুলল সে। খানিক থেমে আবার বলল- আমি যখন ফ্থল ফুটে রই তখন মৌমাছি প্রজাপতি উড়ে উড়ে বসে আমার দেহে। আমার থেকে রস নিয়ে মধু বানায়।
কাঁঠাল বলল- তাতে কী? শোন, ছোট ছোট কোন কোন মুচি কাঁঠাল পেকে যায়। তখন নানা পাখি ঠোকর দিয়ে খেয়ে পেট ভরায়। দেখ নাই তা? আর গাছের পাতার জন্য ছাগল কী পাগল নয়?
এবার ঝটকা এক বাতাসে লাফিয়ে উঠে আম বলল- পাতার কথা বল? দেখেছ ভূতের আছর না লাগা, কুদৃষ্টিকে বাধা দেয়া ইত্যাদিতে আমার পাতা বেঁধে দেয়?
বড় তো তাই নড়তে চড়তে পারে না কাঁঠাল। নিজ জায়গায় থেকে রাগত স্বরে বলল- হয়েছে হয়েছে তোমার ভূত তাড়া। আমার বীচি দিয়ে ভর্তা, ভাজি, ডাল, তরকারি তৈরি করা যায়। আর তোমার? চেটে চুটে খেয়ে ফেলে দিতে হয়।
না জেনে কী সব বল? ক্ষেপে গিয়ে আম আরও বলল- তোমার বীচি জিহবার স্বাদ মেটায়। আর আমার আঁটি মনের স্বাদ মেটায়। মানে বাঁশি বানিয়ে বাজায়। ‘আম আঁটির ভেপু’ শোননি? বাতাসের তোড়ে কাছে এগিয়ে বলে- তুমি তো হিংসুক। কেউ তোমাকে খেতে চাইলে সহজে বিলিয়ে দাও না। আঠা লাগিয়ে দাও হাতে, মুখে।
শোন শোন, বিলিয়ে দেয়ার কথায় বাহাদুরি কর না। কাঁঠাল বলল। তোমাদের কেউ কেউ এমন টক যে কউ মুখে দিলে চোখ মুখ উল্টিয়ে ফেলে। থু থু করে ছুড়ে ফেলে দেয়। আর আমাকে হিংসুক বল? খানিক থেমে কাঁঠাল বলে-শুধু পাকায় কেন কাঁচাতেও আমাকে রেঁধে খায়। খেয়ে ঢেকুর কেটে বলে,কী স্বাদ!
এবার কথা প্রায় কেড়ে নিয়ে আম বলে ওঠে-কাঁচার কথা তুললে? পারবে আমার সাথে? আমার কাঁচা অবস্থায় নুন মরিচ দিয়ে মেখে খেতে হুড়োহুড়ি তো দেখেছ? আর যখন টক রান্না করে খায় তখন হাত চেটে খাওয়ার ধরনটা দেখেছ? আচার বানিয়ে ভরে রাখে বোতলে। জান?
কাঁঠাল গাল ফুলিয়ে বলল- আমার বীচি অনেক দিন পর্যন্ত রেখে খাওয়া যায়। বিক্রিও করা যায়।
আম কথা কেড়ে নিয়ে বলল- আমাকে কী রেখে দিয়ে খায়না? তোমাকে খেলে গায়ে গরম লাগে। খেয়ে কেমন ঝিমুনি ভাব আসে। আঠা লাগে ঠোঁটে,মুখে, হাতে। তাইতো এ ভয়ে অনেকে খেতে চায়না।
কাঁঠাল চেঁচিয়ে বলে উঠলো-তোমার বুঝি কিছু হয় না? বেশি খেলে কী পেটের অসুখ হয় না?
আম গর্বের ভাব নিয়ে বলল-দেখেছ? আমার ডালে কলম না কী দিয়ে ছোট ছোট করে অল্প জায়গায়ই রোপণ করে। ছাদে টবে রেখে দেয়। দেখ, ওতেও ফল দেই।
কাঁঠাল অহংকারী ভাব নিল এবার। বলল-তুমি পুচকে। এজন্যই ছোট গাছেও থাকতে পার। আমার দেহ দেখেছ? বিশাল নয়? তুমি বল, ছোট গাছে থাকা কী সম্ভব হবে আমার?
অহংকার দেখাইও না, বুঝলে। আম নড়ে চড়ে উঠে বলল। আবার বলল-জান, আমার গাছের খড়ি সবার পছন্দ। সহজে ফার্ণিচার বানানো যায় আমার গাছ দিয়ে। পুরাতন গাছ হলে অনেক দিন টেকসই আমার।
হেসে ফেলল কাঁঠাল। বলল- অহংকার তুমি তো দেখাচ্ছ। ফার্ণিচারের কথা বললে তো শোন, আমার গাছে সারি হলে তা দিয়ে তৈরি ফার্ণিচারের চাহিদা কী দেখেছ? খোঁজ নিও একবার।
আম বলল-কথা আর বাড়াইও না। দেখেছি তোমার কান্ড কীর্তি। শোন, আমায় কুড়াতে কত্ত মজা! ছেলে-মেয়েরা হৈ হুল্লোড় করে কুড়ায় আমাকে। এ নিয়ে ছড়া শোননি? আম সত্ত্ব তো বোঝ?
কাঁঠাল না থামতে দিয়ে আমকে শোনালো-আমাকে খাওয়া নিয়ে শেয়ালের গল্প তো শুনেছ? আমার রস দিয়ে বড়া, পিঠা করে যখন খায় কী তৃপ্তি ফুটে ওঠে মুখে চোখে। তা কী দেখ না?
আম চিৎকার দিয়ে বলে-শুনেছ আমার কত্ত নাম! কী আকর্ষণীয় সেগুলো?
তোমার নাম? আমার একটাকে দিয়ে অনেকে খেতে পারে। আর তোমাদের অনেকগুলো একজনকে খেতে লাগে। আরও শুনে রাখ- আমার কোন কিছুই ফেলনা নয়।
পাশের জামরুল, জাম শুনতে শুনতে আর চুপ করে থাকতে পারল না। দু’জনে বলল- হঠাৎ কী হলো তোমাদের মাঝে? লিচুও একথা বলতে বলতে বাতাসের ঝাপটায় এগিয়ে এসে আবার পিছালো।
আম-কাঁঠাল যেন হুঙ্কার দিয়ে উঠলো এক সঙ্গে। কিন্তু দুজনের উচ্চস্বরের কারণে কথার মানে বুঝতে পারল না জাম, জামরুল, লিচু।
থামছে না আম-কাঁঠাল। তর্ক করতেই থাকল। কাউকে থামাতে পারল না তারা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। এক সময় কমে এলো আম- কাঁঠালের চিৎকার। রাতে বাদুড়ের ডানার ঝাপটানি শোনা গেল আম গাছে। কাঁঠাল ফিক ফিক করে হাসল। কারণ? বাদুড় হয়তো আমকে সাবাড় করে দিয়েছে।
সকাল হল। দেখা গেল সত্যই আমের কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছে বাদুড়। অনেক কায়দা কষ্টে ঝুলিয়ে আছে সে। মন ভার তার।
কিছুক্ষণ পর ক’টি কাক উড়ে এলো। ঠোকর বসালো কাঁঠালে। এক এক করে বেশ কিছু দানা খেয়ে ফেলল। কাঁঠালের হাসি ভাব উড়ে গেল।
আম জুল জুল করে তাকাতে থাকল নিজের দিকে একবার, কাঁঠালের দিকে একবার। কাঁঠালও তাই করল।
লিচু, জাম, জামরুল মুখ খুলল। বলল- কালকেই না কী গর্বে তর্ক ঝগড়া করলে দু’জন। লটকন যোগ দিল ওদের সাথে। বলল-কে কী বললে বল-সবাই কী এক উদরেই যাইনা? হয়তো জিহবায় স্বাদের কম বেশি যা। লিচু, জাম, জামরুূল বলল-হ্যাঁ ঠিক বলেছ ভাই। লটকন বলল- হয়তো আমার যা আছে তোমার তা তত নেই। আবার তোমার যা আছে তা আমার নেই। আমাদেরও তো খেলে তৃপ্তির হাসি হাসে। তাই না? ঠোকরানো দেহে আম কাঁঠাল তাকিয়ে থাকল একে অপরের দিকে। গাছের নীচ দিয়ে দু’জন গল্প করে যাচ্ছে যে, আজ আম, কাঁঠাল, দুধ,খই,মুড়ি, চিড়া একখানে করে খেলাম। আহ্! কী তৃপ্তি।

আরও পড়ুন...

নওগাঁর নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত!!

এনবিএন ডেক্সঃ ঈদ উপলে নওগাঁর মহাদেবপুরের ঐতিহ্যবাহী সাতরা বিলে অনুষ্টিত হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। উপজেলার …