সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সয়দাবাদ গ্রামের জনবসতি স্থানে অবৈধ ভাবে ডাইং কারখানা (সূতা রং ও প্রসেস করার মিল) গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানার রাসায়নিক পদার্থের দূষিত বর্জ্য পাইপ দিয়ে মাটির নিচে ভূগর্ভস-রে দেয়া হয়েছে। ফলে আশেপাশের সকল নূলকূপের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। এই পানি পান ও ব্যবহার করায় অনেকেই চর্মরোগে আক্রান- হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সয়দাবাদ গ্রামের মাঝখানে জনবসতির মধ্যে ফিরোজা রং করার জন্য রাবেয়া ডাইনিং কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এই কারখানার দূষিত বর্জ্য পাশেই একটি গর্ত করে তার মধ্যে ফেলা হচ্ছে। গর্তের মধ্যে পাইপ বোরিং করে এই দূষিত বর্জ্য মাটির নিচে পানির স-রে (গভীর লেয়ারে)পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে এলাকার অধিকাংশ নলকূপের পানি দূর্গন্ধযুক্ত এবং দূষিত হয়ে পড়েছে। এই পানি ব্যবহার করে অনেকেই চর্মরোগ, পেটের পীড়া, সহ নানা জটিল রোগে আক্রান- হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ পরিসি’তি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এলাকাবাসীরা কারখানাটি বন্ধ বা স্থানান্তর করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেছে। কোন প্রতিকার না পাওয়ায় অনেকেই নিরুপায় হয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। সয়দাবাদ গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, তারা মিয়া, আমিরুল ইসলাম সহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ইতোপূর্বে এলাকাবাসীদের বিরোধীতা সত্ত্বেও জোর করেই জনবসতি এলাকায় এই ডাইং কারখানা স্থাপন করা হয়। বর্তমানে ডাইং কারখানার বর্জ্যে এই এলাকায় বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। গত দুই বছর আগে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট এবং সমপ্রতি বর্তমান চেয়ারম্যান সহ উপজেলা প্রশাসন এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে প্রতিকার চেয়েও কোন সুফল পাইনি। । এই ক্ষতিকর বর্জ্য চাপ প্রয়োগ করে পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস-রে দেওয়া হচ্ছে। যা ভূগর্ভস- পানির সংগে মিশে এলাকার টিউবয়েলের পানি বিষাক্ত করে ফেলেছে। এই পানি পান ও ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। লোকজন দূর থেকে পানি এনে পান করছে। কারখানার সন্নিকটের তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিন বলেন, আমাদের বাড়ীর নলকূপের পানি খুব ভাল ছিল। গত ২ বছর হলো টিউবয়েলের পানি দূর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। এই পানি ব্যবহার ও পান করার ফলে আমার মা মনোয়ারা বেগম (৬০) মারাত্বক ভাবে চর্মরোগে আক্রান- হয়ে বর্তমানে মৃত্যুর সংগে পাঞ্জা লড়ছে। তাকে চিকিৎসা করতে করতে আমি নিজেও এখন ঋণগ্রস- হয়ে পড়েছি। গতমাসে আমার স্ত্রীও চর্মরোগে আক্রান- হয়ে পড়েছে। কারখানার নিকটবর্তী অপর বাসিন্দা মানিক ঘোষ চর্মরোগে অসুস’ হওয়ার পর ভালো পানির অভাবে বাধ্য হয়ে বাড়ীঘর ছেড়ে টাংগাইল জেলা সদরে মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিষয়ে সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৌপ্তিক আহমেদ মিঠু অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে সভা করে কারখানাটি স্থান্তর করার জন্য মালিককে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যদি কারখানাটি অনত্র স্থান্তর-র অথবা বন্ধ করা না হয় তাহলে প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানানো হবে। স্থানীয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডাঃ আবুল হাশেম অনু জানান, এলাকায় পূর্বের চেয়ে চর্মরোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগীয় অফিস বগুড়ায় যোগাযোগ করা হলে কার্যালয়ের ল্যাবরেটোরী টেকনিশিয়ান মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, উক্ত এলাকায় কোন ডাইং মিলের অনুমতি নেই। তাছাড়া ফিরোজা রংএর বিষয়ে এখন কোন প্রকার অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। যদি তারা বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করে তা হলেও এটির অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কারখানার মালিক মোঃ আবুল হাশেম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই বিষয়টি স্বীকার করে জানান, এলাকায় পাওয়ারলুম থাকায় কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যেতে পারে, সেজন্য গর্ত করে একটি স্থানে রাখা হচ্ছে, সেখান থেকে আপনা আপনিই শুকিয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তবিবুর রহমান তালুকদার জানান, এরকম জনবসতি স্থানে সরকারের অনুমোদন ছাড়া ডাইং কারখানা স্থাপন এবং পরিবেশের ভয়াবহতা সম্পর্কে এর আগে তিনি কিছু জানতেন না। ডাইং কারখানার দূষিত বর্জ্যের ভিতর অনেক কিছু থাকে এর মধ্যে ক্রোমিয়াম ধাতু সব চেয়ে বেশী ক্ষতিকর। এই ধাতুর বিষক্রিয়ায় চর্ম রোগসহ নানা রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন জানান, বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থ্য নেয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন...
নওগাঁয় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে সেমিনার
নওগাঁ প্রতিনিধি:- ছাত্র জনতার অঙ্গীকার নিরাপদ সড়ক হোক সবার এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে নওগাঁয় …