সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা ও পোরজনা গ্রামে নকল ভেজাল দুধ তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। ভ্রাম্যমান আদালত এসকল কারখানা থেকে দুধ উৎপাদনের উপকরন সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদী জব্দ করেছে। একই সঙ্গে আদালত তিনটি দুধের কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। গ্রামবাসী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন- এলাকা জামিরতা গ্রামের প্রায় ২৫টি বাড়ীতে সোয়াবিন চিনি রং ও দুধ মিশিয়ে (নতুন প্রযুক্তিতে) নকল ভেজাল দুধ তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর রোববার দিনভর শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাসেল সাবরিন এর নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমান আদালত থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় উক্ত গ্রামের পংকজ ঘোষ ও কৃষ্ণ ঘোষের বাড়ী থেকে নকল ভেজাল দুধ তৈরির উপকরন হিসেবে চিনি, খাবার সোডা, সোয়াবিন তেল, দুধ তৈরির নানা ধরনের যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমান দলটি বৈদ্যনাথ ঘোষ, গৌরঙ্গ ঘোষ, হারাধন ঘোষের বাড়ীতে অভিযান চালালেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। এসকল বাড়ীঘর তালাবদ্ধ অবস’ায় পাওয়া যায় কয়েকজন মহিলারা থাকলেও বাড়ীর পুরুষ ব্যক্তিরা সবাই পালিয়ে যায়। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালত পোরজোনা গ্রামের অশোক ঘোষ, পরম ঘোষ ও মনোঘোষের কারখানায় অস্বাস’্যকর পরিবেশে দুধ থেকে ছানা উৎপাদনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ২০ লিটার ভেজাল দুধ জনসন্মুখে ধংস করা হয়। অভিযান চালানোর সময় গ্রামবাসীদের মধ্যে আবুল কাশেম, বলরাম সরকার, মনিরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার বেশ কয়েকজন ঘোষ সম্পদায় সহ অন্য পেশার লোকজন নকল ভেজাল দুধ তৈরি করে আসছে। বাড়ীতে বসেই স্বল্প সময়ে এই কাজ করতে পারছে। এধরনের দুধ তৈরি করতে তারা ২ লিটার সোয়াবিন তেল, আধা কেজি চিনি, এক টাকার মূল্যের হলুদ রং (কেমিকাল) এবং ১০ লিটার দুধ ব্যবহার করে থাকে। এই সকল উপকরন তারা ব্লান্ডার মেশিনের মধ্যে দিয়ে আধাঘন্টা ধরে ঘুরানোর পর ভাল ভাবে মিশ্রন করে এগুলো ৩০ কেজি পানির মধ্যে মেশানো হয়। এগুলো মেশানোর পর নাড়া চারা করলে দুধের মত হয়। এ কাজে মোট খরচ হয় ৬ শত ২২ টাকা। তৈরি হওয়ার পর এ দুধ তারা বিক্রি করে থাকে ১ হাজার ৫ শত ২০ টাকা। এতে তাদের দ্বিগুনেরও বেশী লাভ হওয়ায় এই ব্যবসায় অনেকেই শুরু করে। এই দুধ স্থানীয় জামিরতা বাজারে অবসি’ত বৈদ্যনাথ ঘোষের নিজস্ব ভাবে স্থাপিত শিতলী করন কেন্দ্রে বিক্রি করা হয়। পরবর্তিতে এই দুধ প্রাণ, টাটকা ও আরডিএ কোম্পানীর কাছে পাঠানো হতো। সূত্রটি আরও জানায় সোয়াবিন এবং চিনি মিশ্রনের ফলে দুধের ফ্যাট এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতো। যে কারনে দুধ পরীক্ষা করলে তেল রয়েছে এটি ধরা পরতো না। দুধে ফ্যাটের পরিমান ৪ থেকে ৫ ভাগ মিটারে পরিলক্ষিত হতো। নাম প্রকাশ করার না শর্তে স’ানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, এই দুধ তৈরির জন্য এ সকল লোকজন বাড়ীতে বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে অধিক মূল্যে আসল দুধ সংগ্রহ করতো। কারন নকল ভেজাল দুধ তৈরি করতে হলেও কিছু আসল দুধের প্রয়োজন হয়। যে কারনে স্থানীয় বাজারে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা লিটার দুধ বিক্রয় হতো। অপর দিকে এই ভেজাল কারীরা ৩৮ টাকায় দুধ কোম্পানীর কাছে বিক্রয় করতো। কম মূল্যে বিক্রয় করেও তাদের দ্বিগুনেরও বেশী লাভ হতো। দুধে লাভ বেশী বিধায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে জেনারেটর ব্যবহার করে শিতলী করন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এই কেন্দ্রের মাধ্যমেই সকল ভেজাল দুধ সরবরাহ হতো বলে তারা উল্লেখ করে। এদিকে ভ্রাম্যমান আদালত যেকোন মূহুর্তে আসতে পারে এই আশংকা করে বৈদ্যনাথ ঘোষ তার নিজস্ব শিতলী করন কেন্দ্রের ভিতর থাকা ভেজাল দুধ গত শনিবার রাতে যমুনা নদীতে নিয়ে ফেলে দেয়। এর পর থেকে তার শিতলী করন কেন্দ্রে দুধ ক্রয় বন্ধ রাখা হয়েছে। এবং শিতলী করন কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বৈদ্যনাথ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পূর্ব পুরুষ থেকে দুধের ব্যবসা করে আসছি। আমার ছেলে অংশীদারের ভিত্তিতে এই শিতলী করন কেন্দ্রটি স্থাপন করেছে। এই কেন্দ্রে পাঁচ থেকে ছয় হাজার লিটার দুধ মজুদ রাখার ক্ষমতা রয়েছে। আমার নাম ডাক বেশী বিধায় আমার শত্রুও বেশী হয়েছে। তারা আমার ব্যবসাকে বন্ধ করার জন্য নানা পায়তারা করছে। আমি নিজে কোন ভেজাল দুধের ব্যবসা করি না। গ্রাম থেকে দুধ এনে আমি বাইরের কোম্পানীর কাছে সরবরাহ করি। তবে এলাকায় অনেকেই নতুন প্রযুক্তিতে ভেজাল দুধ তৈরি করছে। এই দুধ তিনি ক্রয় করেন না বলে উল্লেখ করেন। ক্রয় কৃত দুধ তিনি প্রাণ, আরডিএ, টাটকা কোম্পনীতে প্রতিদিন পাচ হাজার লিটার করে করে সরবরাহ করতেন বলে উল্লেখ করেন। এখন বন্ধ আছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোম্পানীর অসুবিধা হয়েছে বিধায় তারা দুধ না নেয়ায় দুধ সংগ্রহ বন্ধ রাখা হয়েছে। স’ানীয় সমবায়ীদের মধ্যে আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা ৪৫ টাকা করেও দুধ পাইনা, এলাকার কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারনে তারা অধিক মূল্যে দুধ ক্রয় করেছে। আবার তারা কম দামে বাইরে বিক্রয় করেছে। সার্বিক বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাসেল সাবরিন জানান, দুধে ভেজাল হচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পর পুলিশ নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত চালানো হলো। কিছু কিছু স্থানে আইনগত ভাবে জরিমানা করা হয়েছে, ভেজাল এবং নকল দুধ যারা তৈরি করছে তাদের যন্ত্রপাতি জব্দ করে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে। অনেকে ভেজাল কারীরা পালিয়ে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে এই নকল ভেজাল কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা অব্যহত থাকবে।
Home / সারাদেশ / সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নকল ভেজাল দুধের কারখানায় ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা ও মামলা দায়ের
আরও পড়ুন...
নওগাঁয় সীমানা প্রাচীরের দ্বন্দে প্রাচীর ভাংচুর ও মারপিট
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁয় সীমানা প্রাচীরের বিরোধের জের ধরে ভোগদখলীয় সম্পত্তিতে নির্মাণাধীন ইটের সীমানা প্রাচীর ভাংচুর …