ফেসবুকে ভাইরালের পর রাতের আঁধারে বৃদ্ধার বাড়ীতে ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেলেন নওগাঁর ডিসি
এপ্রিল ৫, ২০২০
সারাদেশ
168 Views
নওগাঁ থেকে মোঃ আবু বকর সিদ্দিকঃ ৭০ বছরের বৃদ্ধা সাবিয়া বেওয়া। নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া বিহারি কলোনি মহল্লার ছোট যমুনা নদীর গাইড ওয়াল-সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে তিনি বসবাস করেন। সেখানে ঝুপড়ি ঘরে গত কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি। স্বামী নুরু মিয়া মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করে জীবন চলতো তার। সংসারে তার অন্য কোন সদস্য নাই। তার বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর সে কাজ করতে পারে না। ভিক্ষা করে দিন চলে তার। দেশে প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ঘরবন্ধী হয়ে পড়েন ৭০বছরের এই বৃদ্ধা। গত কয়েক দিন ঘরের বাহিরে যেতে না পারায় তিনি অসহায় হয়ে পড়লে তার বাড়ীতে ২দফায় খাদ্য সামগ্রী পৌছানো হয়। উল্লেখ্য বর্তমানে তার ঘরে ৩০দিন চলার মত খাবার রয়েছে। স্থাণীয়রা জানায়, সাবিয়া বেওয়া অত্যন্ত লোভী প্রকৃতির নারী সে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম অভাব দেখিয়ে মিড়িযায় আলোড়ন সৃষ্টি করে ফয়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছিলো বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। ফেসবুকে ঘটনাটি প্রকাশ হবার পর তার বাড়ীতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ও খাবার সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর-রশীদের নজরে আসে। জনগমাগম এড়াতে ওই দিন শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুনকে সাথে নিয়ে সেই বৃদ্ধার বাড়ীতে যান জেলা প্রশাসক। তার পরিবারের খোঁজ খবর নেন। এতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধা। পরে সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রীর তার হাতে তুলে দেন।
বৃদ্ধা সাবিয়া বেওয়া জানান, দেশে খাবার নাই এ আতঙ্কে তার ঘরে খাবার থাকলেও সে গত শুক্রবার দুপুরে উত্তপ্ত রোদে বিহারি কলোনি মাঠে একটি টিনের ওপর নষ্ট ভাত ফেলে না দিয়ে সে গুলো শুকাচ্ছিল। পরে ভাত শুকিয়ে চাল হলে আবার রান্না করে খাবে। সে আরও জানায় একটি ছেলে এসে মোবাইল ফোনে আমার ছবি নেয়। ছবি নেওয়ার পর থেকে আমার বাড়ীতে একের পর এক খাদ্য সামগ্রী আসতে শুরু করে। আমার বাড়ীতে পূর্ব থেকেই প্রায় ১মাস চলার মতো খাবার ছিল।
জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি এক জন বৃদ্ধা খাবারের অভাবে রোদে ভাত শুকাছে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম জনগমাগম এড়াতে রাতে ওই বৃদ্ধা বাড়ীেেত যাবো এবং তার বাড়ীতে গিয়ে তার সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তার হাতে খাদ্যসামগ্রী দিব। পরে তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে, একদিন আগে ২জনের কাছ থেকে কয়েক কেজি চাল সে পেয়েছে। সে ভাত না খেতে পারে হতাশায় সেগুলো ফেলে না দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে দেয় এবং পরবর্তী সে এটা খাবে বলে জানায়। পূর্ব থেকেই বৃদ্ধা সাবিয়া বেওয়ার ঘরে ৩০দিন চলার মত খাবার মজুত ছিল। অথচ ফেসবুকের মাধ্যমে তার অসহায়ত্বের কথা ফেসবুকে ভায়রাল করে সারা দেশের মানুষের মাঝে দেশের ভাব মূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। তিনি জানান সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট ত্রান বরাদ্দ আছে এবং আরও বরাদ্দ আসা অব্যাহত আছে।