নওগাঁর রাণীনগরের আতাইকুলা বধ্যভূমিতে ৪৪ বছরেও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ঃ অসহায় শহীদদের পরিবার!!
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি ঃ নওগাঁর রাণীনগরের আতাইকুলা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী একমাত্র ঐতিহাসিক বধ্যভূমিতে স্বাধীণতার ৪৪ বছর পার হলেও আজও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ৫২ জন শহীদদের পরিবার এখনও পায়নি কোন সাহায্য সহায়তা, পায়নি কোন বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা। বাড়ীর কর্তাদের হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এই সব শহীদ যোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। আজ অনেকেই মানুষের বাড়ী বাড়ী ঝি এর কাজ করছেন। বধ্যভূমিটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্দ্যোগে কোন রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাত্র। শহীদদের স্মৃতি রার্থে এলাকাবাসীদেরও দাবী শহীদ পরিবারের এই বধ্যভূমি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। ওই দিনের নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও লিখিল চন্দ্র পাল ওই দিনের করুন হত্যাযজ্ঞের কাহিনী অশ্র“সিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল রোজ রবিবার সকাল ১০ টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতিটি বাড়ী থেকে নগদ টাকা স্বর্ণালংকারসহ বাড়ীর নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ীর উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রাখে। একর পর এক নারীদের উপরে চালায় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের উপরে চলে ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৫২ জন শহীদ হন। পরে তারা বিভিন্ন বাড়ীতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোন রকমে বেঁচে যায় প্রদ্যুত পাল, সাল পাল ও লিখিল পাল। প্রদ্যুত পাল জানান, ওই দিন তার বাবা, কাকা জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সাথে তাকেও সারিবদ্ধ করে চালায় ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যে প্রাণ হারায় ৫২ জন লোক। হানাদার বাহিনীরা চলে যাবার পর রক্তাক্ত অবস্থায় সে তার বাড়ীতে যায়। তিনি জানান সবাইকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়েছি। স্বাধীণতার ৪৪ বছর পার হলেও কোন সরকারের আমলে কোন শহীদ পরিবার এখনও কোন সাহায্য সহায়তা পায়নি। কোন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে উঠেনি এই বধ্যভুমিতে। সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক ১৯৯৬ সালে নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোন রকমে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করলেও আর কোন কাজ হয়নি। বধ্যভূমিটি পরে আছে অযতœ অবহেলায়। সাধন পাল জানান, ৩ দিনে ৫২টি লাশ পরে থাকার পর পাশের গ্রামের লোকজনরা কোন রকমে ঘটনাস্থলের পাশেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে। লিখিল পাল জানান, যুদ্ধে বেঁচে গেলেও আজও তাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয়নি। কোন রকমে হারিয়ে যাওয়া পাল সম্প্রদায়ের মাটির ব্যবসা করে বেঁচে আছে তারা। বিধবা রেনু বালা, ফেন্তু বালা ও সবেজু বালা তাদের সেই দিনের করুন কাহিনীর বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা বলেন, স্বামীকে হারিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেক দুখে কষ্টে, অন্যের বাড়ীতে ঝি এর কাজ করে এখনও বেঁচে আছেন তারা। দুঃখের সাথে তারা আরও বলেন ঘটনার ৪৪ বছর পার হলেও এখনও কোন সরকার তাদের কোন সাহায্য সহায়তা করেনি। তাদের ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতার কোন কার্ড। আর কত বয়স হলে তারা বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতা পাবেন। অবিলম্বে সরকারি ভাবে শহীদদের স্মৃতি রার্থে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক এবং এই সব অসহায় সুবিধা বঞ্চিত শহীদ পরিবারগুলোকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা হোক বলে জোর দাবী এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারদের।
আরও পড়ুন...
নওগাঁয় সীমানা প্রাচীরের দ্বন্দে প্রাচীর ভাংচুর ও মারপিট
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁয় সীমানা প্রাচীরের বিরোধের জের ধরে ভোগদখলীয় সম্পত্তিতে নির্মাণাধীন ইটের সীমানা প্রাচীর ভাংচুর …