প্রথম কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে পরের আসরের শুরুর দুটি ম্যাচে হারলো ভিসেন্ত দেল বস্কের স্পেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্পেনের বি গ্রুপের শেষ ম্যাচটা তাই পরিণত হলো কেবল আনুষ্ঠানিকতায়। এরপর ট্রফিটা আপাতত ব্রাজিলে রেখে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দেশের বিমান ধরতে হবে তাদের। চিলির পক্ষে প্রথমার্ধে একটি করে গোল করেন এদুয়ার্দো ভারগাস ও চার্লস আরানগুইস। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে হার এড়াতেই হতো স্পেনের। কিন্তু বুধবার রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে হোর্হে সামপাওলির শিষ্যরা শুরুতেই আভাস দিয়েছিলেন, কী অপেক্ষা করছে গত ছয় বছরে তিনটি বড় শিরোপা জেতা স্পেনের সামনে। মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো চিলি। জর্দি আলবা সেবার দলকে রক্ষা করেন।
১৭তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগটি পায় স্পেন। কিন্তু চাবি আলনসো সরাসরি গোলরক্ষকের দিকে মেরে সুযোগটি নষ্ট করেন। এর তিন মিনিটের মধ্যেই অসাধারণ এক দলীয় প্রচেষ্টায় এগিয়ে যায় চিলি। ডান দিক থেকে স্পেনের রক্ষণ ভেঙে আলেক্সিস সানচেস খুঁজে পান আরানগুইসকে। তিনি অসাধারণ দক্ষতায় বলটাকে পাঠান এদুয়ার্দো ভারগাসের কাছে। প্রথম ছোঁয়াতেই ইকের কাসিয়াসকে ফাঁকি দেন ভারগাস। এরপর পেছনে পড়তে পড়তে বুটের সামনের অংশ দিয়ে টোকা মেরে বল জড়িয়ে দেন জালে। ২৮তম মিনিটে প্রথমার্ধে নিজেদের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিলেন দিয়েগো কস্তা। দাভিদ সিলভার কাছ থেকে গোল করার মতো জায়গায় বল পেলেও বাইরে মেরে নষ্ট করেন আতলেতিকো মাদ্রিদের এই স্ট্রাইকার। ৪৩তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলটা হয় কাসিয়াসের ভুলে। সানচেসের সাধারণ একটা ফ্রি কিক ঠিক ভাবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি স্পেনের অধিনায়ক, পাঞ্চ করে বল ফেলেন বিপজ্জনক জায়গায়। এবার আরানগিসের দারুণ শট আর ফেরাতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগটি পেয়েছিলেন সের্হিও বুসকেতস। বাইসাইকেল কিকে গোললাইনের ঠিক সামনে বুসকেতসকে বল দিয়েছিলেন কস্তা। কিন্তু সেখান থেকেও শট নিতে পারেননি বার্সেলোনার এই মিডফিল্ডার।
৭১তম মিনিটে ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা শেষ করার সুযোগ এসেছিল চিলির সামনে। ইউহেনিও মেনার নিচু ক্রসটি লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মাওরিসিও ইসলা। শেষ দিকে কিছু সুযোগ তৈরি করলেও তার একটিও কাজে লাগাতে পারেনি স্পেন। তাড়াহুড়ো করে মেরে সহজ সুযোগও হাতছাড়া করেছেন তারা। স্পেনকে প্রথম ম্যাচে ৫-১ গোলে হারানো নেদারল্যান্ডস দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় ৩-২ গোলে। চিলি এই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গতবারের রানার্সআপরাও তাই উঠলো শেষ ষোলোতে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে এই দুই দল লড়বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বাগতিক ব্রাজিলকে এড়ানোর লড়াইয়ে। ১৯৯৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স বিদায় নিয়েছিল তার পরের আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে। একই ভাগ্য বরণ করেছিল ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ইতালিও। পরের বার প্রথম রাউন্ড পার হতে পারেনি তারা। স্পেনের বিপক্ষে আগের ১০ ম্যাচের আটটিতেই হেরেছিল চিলি, ড্র করেছিল অন্য দুটিতে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে বিদায় করে সবচেয়ে মধুর প্রতিশোধই নিল চমক জাগানো দলটি।
রাজা থেকে রিক্ত যারা
স্পোর্টস ডেস্ক : ইতিহাস ডাকছিল স্পেনকে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে জয় করতে পারলে ব্রাজিল-ইতালির সঙ্গে শিরোপা ধরে রাখাদের ছোট্ট তালিকায় জায়গা হতো তাদের। ব্রাজিল-ইতালির সঙ্গে একটি তালিকায় যোগ দিল ঠিকই, যা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার।
রাজার রিক্ত হওয়ার ঘটনা বিশ্বকাপে এর আগে ৪ বার ঘটেছে। যার দুটিই ইতালির, একটি ব্রাজিলের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের আরেকটি ঘটনা ফ্রান্সের।
ইতালি ১৯৩৮ : ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে টানা দুটি শিরোপা জয়ের পর সবচেয়ে বেশি বছর শিরোপা ধরে রেখেছিল ইতালি। তৃতীয় বিশ্বকাপের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১২ বছর বিরতিতে বসে ১৯৫০ সালের আসর। ১৯৪৯ সালে বিমান দুর্ঘটনায় কিছু খেলোয়াড় মারা যাওয়ায় ইতালি দলটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এর পর ১৯৫০-এর বিশ্বকাপে অংশ নেয়ারই আগ্রহ ছিল না ইতালির। পরে অবশ্য আয়োজকদের অনুরোধে ব্রাজিল বিশ্বকাপে অংশ নেয় ইতালি। তবে বিমানে নয়, তারা ব্রাজিল গিয়েছিল জাহাজে। ভগ্ন দল নিয়েও প্যারাগুয়কে ২-০ গোলে হারিয়েছিল ইতালি। তবে সুইডেনের কাছে ৩-২ গোলের হারে প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। জাহাজে করেই আবার বাড়ি ফেরে ইতালি।
ব্রাজিল ১৯৬৬ : ইতালির মতো ব্রাজিলও টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়েছিল। ১৯৫৮ সালের পর ১৯৬২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। কিন্তু ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারেনি ভিসেন্তে ফিওলার দল। পেলে-গারিঞ্চা জুটির কল্যাণে বুলগেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুরুটা ভালো করেছিল ব্রাজিল। কিন্তু ওই ম্যাচেই পেলে চোটে পড়েন। দ্বিতীয় ম্যাচে তার অনুপস্থিতে হাঙ্গেরির কাছে ৩-১ গোলে হারে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। পেলে ফিরলেও তৃতীয় ম্যাচে খেলতে পারেননি গারিঞ্চা। ইউসেবিওর পর্তুগালের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল।
ফ্রান্স ২০০২ : প্যারিসে নিজেদের সমর্থকদের সামনে ১৯৯৮-এর ফাইনালে ব্রাজিলকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। কিন্তু পরের বিশ্বকাপটা তারা শুরুই করে খুব বাজেভাবে। বিশ্বকাপ অভিষিক্ত সেনেগাল উদ্বোধনী ম্যাচে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন উপহার দেয়। ফ্রান্সকে হারায় তারা ১-০ গোলে। পরের ম্যাচে উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে নকআউট পবের্র আশা বাঁচিয়ে রাখে ফ্রান্স। পরের ম্যাচে ডেনমার্কের কাছে ২-০ গোলের হারে তিন ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয় ফ্রান্সের। একটিও গোল করতে না পারা দলটি বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্সের রেকর্ড গড়ে।
ইতালি ২০১০ : ২০০৬ সালের নাটকীয় ফাইনালে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ইতালি। চার বছর পর শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে শক্তিশালী দল নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিল ইতালি। প্যারাগুয়ে, নিউ জিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার সঙ্গে তুলনামূলক সহজ গ্রুপেই পড়েছিল ইতালি। ফুটবল প িতরা ধরেই নিয়েছিল, সহজেই নকআউট পর্বে উঠবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। নিয়তি ঠিক করে রেখেছিল অন্য কিছু। প্রথম দুই ম্যাচে প্যারাগুয়ে ও নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে তারা। শেষ ম্যাচে স্লোভাকিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় ইতালি।
স্পেন ২০১৪ : একসঙ্গে দুটি ইউরো ও একটি বিশ্বকাপ জেতা স্পেন দলটিকে এবার শুরু থেকেই অগোছালো মনে হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫-১ গোলে উড়ে যাওয়ার পর একটু যেন হতবিহবল হয়ে পড়েছিল স্পেন। চিলির বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে কিছুটা হলেও নিজেদের ফুটবল-দর্শন থেকে সরে এসেছিল ভিসেন্তে দেল বস্কের দল।
লাভ হয়নি, চিলির কাছে ২-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ল লা ফুরিয়া রোহা নামে পরিচিত দলটি।
আরও পড়ুন...
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত
এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। …