7 Agrohayon 1431 বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / জাতীয় সংবাদ / বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল : প্রধানমন্ত্রী সম্পর্ক জোরদারের কথা বললেন চীনা প্রেসিডেন্ট গজারিয়ায় গার্মেন্টস পল্লী নির্মাণ করবে চীন কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণে সমঝোতা চুক্তি

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল : প্রধানমন্ত্রী সম্পর্ক জোরদারের কথা বললেন চীনা প্রেসিডেন্ট গজারিয়ায় গার্মেন্টস পল্লী নির্মাণ করবে চীন কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণে সমঝোতা চুক্তি

এনবিএন ডেক্সঃ চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সেবা খাতে বিনিয়োগ চীনা ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক ও অর্থবহ হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেইজিংয়ে বাণিজ্য বিষয়ক এক সেমিনারে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। চায়না ইনস্টিটিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি: বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা ফোরাম’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজক ছিল চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ওষুধ, সিরামিক, পর্যটন, সড়ক ও রেল যোগাযোগ, পেট্রোকেমিক্যাল এবং কৃষি খাতে চীনের উদ্যোক্তারা যৌথ বিনিয়োগেও এগিয়ে আসতে পারেন। দুই দেশের বাণিজ্যে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, সিরামিক, ডালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির মাধ্যমে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনবে। এপিটিএর অধীনে ২০১০ সালের জুলাই থেকে চীনে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৭০০ পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি বাংলাদেশের বাকি সব রপ্তানিযোগ্য পণ্যও চীনের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীন থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে দিয়ে চীন বাংলাদেশের শীর্ষ বাণিজ্য সহযোগী দেশে পরিণত হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকেই চীন বাংলাদেশের অন্যতম বড় আমদানি উৎস বলেও জানান তিনি। বক্তব্যে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগচিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চীনের ৪৯টি কোম্পানি বাংলাদেশের ৮টি ইপিজেডে ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া চীনের আরো ৩০০ কোম্পানির ২৩০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে চীনের হুয়াইয়, সিএমইসি, জেডটিইর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, চীনের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, অবকাঠামো নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, সার, বস্ত্র, চামড়া, সিরামিক, প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনে পণ্য উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই এখানকার কারখানাগুলো বাংলাদেশ থেকে পণ্য উৎপাদন করছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদনে কম ব্যয়ের পাশাপাশি কমমূল্যে বিপুল শ্রমশক্তির সহজলভ্যতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বন্ধুত্বপূর্ণ বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতি অনুসরণ করছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমান সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি তাদের আইনি সুরক্ষা এবং বিনিয়োগকৃত মূলধন ও লভ্যাংশ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি’ এবং ‘দ্বিপক্ষীয় কর আইনের’ মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ষোলো কোটি মানুষের দেশ হওয়ার কারণেও বাংলাদেশ বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক আগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, তার সরকার সারা দেশে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা ছড়িয়ে দেয়ায় তরুণদের কর্মসংস্থান বাড়ার সঙ্গে তাদের আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমে এসেছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ করলেও, আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় শেখ হাসিনা গত বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। বাংলাদেশকে এখন ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিআইটি) চেয়ারম্যান জিয়াং জেংউইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন, বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আজিজুল হক, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, চীনের সেনি হেভি ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার চুই ইয়ংগিয়ান এবং নিংবো ফোর সিজন ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার বাও বুইবং বক্তব্য রাখেন।
গজারিয়ায় গার্মেন্ট পল্লী নির্মাণ করবে চীনা কোম্পানি
বাংলাদেশে গার্মেন্ট পল্লী স্থাপনে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তত রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) চীনের ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। গতকাল মঙ্গলবার চীনের বেইজিংয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এমওইউ্থর আওতায় ওরিয়ন হোল্ডিং কোম্পানি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় গার্মেন্ট পল্লী নির্মাণ করবে। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম এবং ওরিয়ন হোল্ডিং কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা ট্যাং ঝিয়াওজি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এমওইউতে স্বাক্ষর করেন।
কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণে সমঝোতা চুক্তি
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। গত সোমবার রাতে এই সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার বেইজিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং চীনের পক্ষে তাদের পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট চি-খো মাও স্মারকে সই করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়নে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে চীন চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণ করবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের কথা বললেন চীনা প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরো জোরদারের কথা শেখ হাসিনাকে বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সফরের পঞ্চম দিন গতকাল মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। গ্রেট হল অফ পিপলসে শেখ হাসিনা পৌঁছলে করিডোরে এসে তাকে স্বাগত জানান শি জিনপিং। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক আরো অনেকদূর এগুবে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। উনারা মনে করেন, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক একটি কৌশলগত সম্পর্ক।ওই উদ্দেশ্যেই চীনের সরকার কাজ করে যাবে। সামরিক সহযোগিতা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরো গাঢ় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক মন্তব্য করে শি জিনপিং ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথাও তুলে ধরেন বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানির কথাও বলেন বলে শহীদুল হক জানান। বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে সুপার হাইব্রিড ধান উৎপাদনে বিনা শর্তে সহায়তা দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শেখ হাসিনাকে চীনের জনগণের ‘পুরনো বন্ধু’ অভিহিত করে বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবেও উল্লেখ করেন শি জিনপিং। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রী প্রেসসচিব এ এইচ এম শামীম চৌধুরী প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণচীনের পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের সভাপতি উ ঝেনশেংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

আরও পড়ুন...

নওগাঁয় ৯টি ককটেল ১৫ টি সাউন্ড বোমাসহ বিপুল পরিমান জিহাদী বই উদ্ধার- ৬ শিবির নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ

এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁ সদরের শহরস্থ নামাজগড় মাদ্রাসা পাড়া থেকে ৯টি ককটেল, ১৫ টি সাউন্ড বোমা …