এনবিএন ডেক্সঃ বিশ্বকাপ বিরোধীতায় ব্রাজিল জুড়ে বিক্ষোভ চলছে গত বছর থেকেই। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে বিক্ষোভ দমনের জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দও রেখেছে দেশটির সরকার। তারপরেও থেমে নেই ফুটবলের দেশটিতে বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা। রাস্তা, বাড়ির ছাদ, দোকানপাট সবকিছুতেই ফুটে উঠেছে বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা আর বিরোধিতার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের হিসাব নিকাশও চলছে পুরোদমে।
দেশটির বড় একটা অংশ বিশ্বকাপকে ঘিরে মোটা অঙ্কের বিদেশী অর্থ উপার্জনের স্বপ্ন দেখছে। ফুটপাতের দোকানদার থেকে শুরু করে নামীদামি বিপণী বিতানের মালিকারাও এ তালিকায় রয়েছেন। আর এই প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিদেশী পর্যটক। বেকারি মালিক রোনালদো ফেরিরা বলেন, ‘আশা করছি প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় লোকজন আমার দোকানে বিয়ার খেতে খেতে খেলা দেখবে। পরের দিন সকালে কফি খেতে খেতে আগের দিনের ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করবে।’ রাস্তায় চিপস বিক্রি করেন মার্সেলো বিশ্বকাপকে ঘিরে তার প্রত্যাশাটাও চমৎকার। তিনি বলেন, ‘ ব্রাজিল ভাল করবে, কারণ আমাদের একটা ভাল দল আছে। তবে তার থেকেও বেশি ভাল হবে ব্যবসা।’ এর আগে ২০১৩ সালে কনফেডারেশন কাপের আয়োজন করে ব্রাজিল। সেখান থেকে ৩৫০ কোটি বিদেশি ডলার আয় করে দেশটি। তাছাড়া অন্যান্য বছরের থেকে সে বছর রেকর্ড পরিমাণ ৫৭ লাখ পর্যটক পেয়েছিল দেশটি। দেশটির পর্যটন সংস্থার প্রত্যাশা বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে এ সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিমূলক আয়োজন কনফেডারেশন কাপেই যদি এত বেশি পরিমাণ বাণিজ্য হয়। তাহলে মূল বিশ্বকাপকে ঘিরে বেশি প্রত্যাশা করতেই পারে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির মানুষ। এ সম্পর্কে জোয়াও ফুর্তাডো নামে এক পর্যটন ব্যবসায়ি বলেন, ‘কনফেডারেশন কাপে মাত্র ৮টি দল অংশ নিয়েছিল, খেলা হয়েছিল ৬টি শহরে। সেখানে বিশ্বকাপে অংশে নেবে ৩২টি দল আর খেলা হবে ১২টি শহরে’। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে নামীদামি বিপণি বিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতের পাশের দোকানগুলো ভরে গেছে ফুটবলীয় জিনিসপত্রে। প্রত্যেকটি দোকানেই বিভিন্ন দেশের পতাকা, জার্সি, টুপি, টি-শার্ট, ফুটবল, বিকিনি, ড্রাম, ভুভুজেলা, মগ সমারোহ। এসব জিনিসপত্র ঝালমুড়ির/হটকেকের মত বিক্রি হওয়ায় খুচরা বিক্রেতারা খুব খুশি। তবে বিশ্বকাপ বিরোধীরা মনে করছে এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্রাজিল থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাচ্ছে ফিফা। এর একটা কারণও অবশ্য আছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ৪০০ কোটি ডলার আয় করবে। ইতোমধ্যে সংস্থাটি ৬৪টি ম্যাচের জন্য ৩৩ লাখ টিকেট বিক্রি করেছে। যার প্রতিটির মূল্য ৯৯০ ডলার বাংলাদেশী টাকায় ৭৯ হাজার ২০০ টাকা। এ প্রসঙ্গে ফিফার মহাসচিব জেরোমি ভালকে বলেন, ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফিফার জন্য একটি আর্থিক সফলতা, যা ইতোমধ্যে অর্জিত হয়ে গেছে। এর আগে এত বেশি টিকেট কখোনই বিক্রি হয়নি। এক মাস দৈঘ্র্যের এই ফুটবল যজ্ঞের শেষ হয়তো রাস্তার পাশের ব্যবসায়ীরা বড় লোক হয়ে উঠবে না। তবে হ্যাঁ, এটাই হবে সবচেয়ে বেশি অর্থ বাণিজ্যের বিশ্বকাপ। সেই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতার মুখে পড়াও বিশ্বকাপও এটি।