এনবিএন ডেক্স: বাজারে নতুন ফল তাল শাঁস উঠতে শুরু করেছে। কাঁচা তালের শাঁস খেতে কার না ভালো লাগে গ্রীষ্মকালের একটি সুস্বাদু রসালো ফল তালের শাঁস। জ্যৈষ্ঠের শুরুতে পাবনার বেড়াসহ পার্শ্ববর্তী সাঁথিয়া, সুজানগর, কাশিনাথপুর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসদর ও বিভিন্ন হাট বাজারে উঠেছে এই ফল। প্রচন্ড গরমে কচি তালের শাঁস সকলকে তৃপ্তি দেয়। তাছাড়া এটি পুষ্টিকর খাদ্য। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে খাওয়া যায় পাকা তাল। প্রচন্ড দাবদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে যখন সাধারণ মানুষের জনজীবন ঠিক তখনই দাবদাহ থেকে বাঁচতে শিশু থেকে তরুণ-তরুণীসহ সকল বয়সের মানুষের পছন্দের ফল তাল শাঁস। তীব্র দাবদাহের মাঝে একটু স্বতি্ব পেতে শৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছেও মধু মাসের ফল তাল শাঁসের কদর বেড়ে বহুগুণ। বেড়া উপজেলার হাট-বাজার প্রত্যন্ত প্রামাঞ্চলের প্রধান প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে বিক্রেতারা এখন হরদমে বিক্রি করছেন তাল শাঁস। কোন কোন বিক্রেতা ভ্যানযোগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল শাঁস বিক্রি করছেন। বিক্রেতারা বিভিন্ন উপজেলা থেকে তাল শাঁস ক্রয় করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক পরিবারের লোকজন। বেড়া উপজেলার পৌর সদরের খেয়াঘাট এলাকায় তাল শাঁস বিক্রেতা বোগদাদ হোসেন জানান, প্রতিবছর মধুমাসে তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি দামে তাল শাঁস ক্রয় করে বিক্রি করে আসছেন। চড়া মূল্যে এ মৌসুমী ফল বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি তাল শাঁস দুই আটি ৬ টাকা ও তিন আটি ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করে প্রতিদিন সে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা আয় করছেন। বেড়া বাজারে ১০-১২টি স্পটে প্রতিদিনই তাল শাঁস বিক্রি হচ্ছে। বেড়া বনগ্রামের আলহাজ মিয়া জানান, প্রতিদিনই প্রায় চারশ’ তাল শাঁস তিনি বিক্রি করছেন। তাল শাঁস বিক্রেতারা আরও জানান, বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তালগাছ খুঁজে বের করি। ছোট তাল শাঁস গাছ ধরে কিনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। ভালো ও বড় আকারে তাল শাঁস গাছের ফল কিনতে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাতে করে ভ্যান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাদে প্রায় প্রতিদিনই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করছেন তারা। সৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড গরমে একটু স্বতি্ব পেতে এখন ভিড় করছেন তাল শাঁস বিক্রেতাদের কাছে। ক্রেতারাও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাল শাঁস। রিকশাচালক থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী বা পেশার লোকজনই মৌসুমী ফল তাল শাঁস কিনতে ভিড় করছেন বিক্রেতাদের কাছে চলতি মৌসুমে তালের সংখ্যা কম হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মৌসুমী ফল তাল শাঁস। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ অঞ্চলে তালগাছ বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। বৈজ্ঞানিক উপায়ে তাল গাছের চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না ফলে ঐতিহ্যবাহী তালের রস, তালের গুড় ও তালের পাটালি হারিয়ে যেতে বসেছে। জলবায়ুগত কারণে প্রচুর পরিমাণে তালগাছ ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর বিভিন্ন কারণে এসব তালগাছ বিলীন হতে চলেছে। প্রতি বছর বয়স্ক হাজার হাজার তালগাছ কেটে গৃহস্থালির কাজ, ইট পোড়ানো, তালের ডোঙ্গা তৈরি, জ্বালানিকাঠ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া অজ্ঞাত রোগ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু তালগাছ অকালে মারা যাচ্ছে। আবার আর্থিক অনটনের কারণে অনেক তালগাছের মালিক তাদের তালগাছগুলো সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছে। গ্রীষ্মকালে তাল পাখার বাতাস গ্রামের গরিব মানুষের শরীরে হিমেল পরশ বুলিয়ে দেয়। ঝড়বৃষ্টি থেকে বাড়িঘরের আত্মরক্ষা ও প্রকৃতি ভারসাম্য রক্ষায় তাল গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাল গাছের অভাবে দেখা যায় না বাবুই পাখির বাসা। অনাবাদি জমিতে যদি পরিকল্পিতভাবে তাল গাছের চাষ করা হয় তবে প্রচুর পরিমাণে তাল ও তালের গুড় উৎপাদন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন...
নওগাঁ সুষ্ঠু আইন শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ ফ্যাসিবাদি স্বৈরাচার প্রতিরোধ, দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, মাদক সিন্ডিকেট, সন্ত্রাসী চিহ্নিতকরণ, সুষ্ঠু আইন শৃঙ্খলা …