এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁর রক্তদহ বিল থেকে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় পানি নিষ্কাশনের ভরাট হয়ে যাওয়া খাল পুনঃ খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রানীনগর উপজেলার রক্তদহ বিল থেকে আত্রাই উপজেলার সোনায়ডাঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার পূনঃ খাল খনন সম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করায় উপজেলা দু’টির খাল তীরবর্তী ৩০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। প্রায় ৪৫ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পেয়ে খড়া মৌসুমে রোপা-আমন ধান চাষের আওতায় আসবে। এছাড়া, খালে সারা বছর পানি থাকার কারণে কৃষকের শষ্য উৎপাদনে সেচ খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এলাকায় কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দুর, খালে দেশী মাছের অভয়ারণ্য সৃষ্টি এবং খালের দু’ধারে বৃক্ষ রোপানের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে। বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রানীনগর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তিতুমীর রহমান জানান, নওগাঁর রক্তদহ বিলে নওগাঁ-বগুড়া-জয়পুরহাট জেলার ২২ টি ক্যানেল দিয়ে পানি আসে। কিন্ত দীর্ঘ দিন থেকে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় রক্তদহ বিলটি এলাকাবাসীর কাছে আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রক্তদহ বিল থেকে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার পানি নিষ্কাষনের খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষার শুরুতেই জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে তলিয়ে যায় ৩০টি গ্রাম। এসব গ্রামের মধ্য সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকে রানীনগরের ঝিনা, কুমুরিয়া, আকনা, বাঁশবাড়িয়া, আত্রাইয়ের আটনা, পৈতা, তিলাবদুরী, জামগ্রামসহ একাধিক গ্রাম। এ অবস্থায় বিগত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষন ও সেচ’ প্রকল্পের আওতায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভরাট হওয়া রক্তদহ খাল পুনঃ খনন শুরু করে। ওই বছরে রক্তদহ বিল থেকে ঝিনা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৭.৬৫৫ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া, ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাষ্ট ফান্ড’ প্রকল্পের আওতায় ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রানীনগরের ঝিনা থেকে আত্রাই উপজেলার সোনায়ডাঙ্গা পর্যন্ত ৭.৬৫০ কিলোমিটার পূনঃখাল খনন কাজ সম্পন্ন করে। এখন এই ১৫ কিলোমিটার পূনঃ খননকৃত খালে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রানীনগর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তিতুমীর রহমান জানান, কৃষি মন্ত্রনালয়ের এ প্রকল্পের উদ্যেশ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা পীড়িত এলাকায় খাল পুনঃ খনন ও খালের পাশে বৃক্ষ রোপন করা। যার মাধ্যমে খাল তীরবর্তী মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা। এছাড়া, খালে সারাবছর পানি থাকার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির পূনর্ভরন সঠিক ভাবে হবে এবং প্রকল্প এলাকায় শত শত গভীর ও অগভীর নলকুপের শুস্ক মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। খাল খননের উপকার সম্পর্কে আত্রাই উপজেলার জাম গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী, আজাহার আলী ও রানীনগরের ঝিনা গ্রামের আব্দুস সাত্তার জানান, রক্তদহ খালটি ভরাট হয়ে দিনে দিনে বেদখল হয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ফসল ডুবে যেত। এ ছাড়া প্রতি বর্ষার শুরুতেই পানি নিস্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। খনন কাজ শেষ হওয়ায় জলাবদ্ধতার আতংক আর থাকবে না। সুষ্টু ভাবে ইরি-বোরো এবং রোপা-আমন ধান চাষাবাদ করা সম্ভব হবে। সারা বছর খালের পানি ব্যবহার করে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে পারবে। বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আত্রাই জোনের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, আত্রাই উপজেলার ৩.১ কিলোমিটার পূনঃ খাল খননের কারনে খালের দু’ধারে দুটি সড়কের সৃষ্টি হচ্ছে। যা গ্রামবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরো উন্নতি করবে। সারাবছর খালের পানি ব্যবহার করে সুফল পাবে। খালের মাছ ধরে এলাকার মৎস্যজীবিরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নওগাঁ রিজিওনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রক্তদহ খাল খনন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ নাজিরুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন ফলে রানীনগর-আত্রাই উপজেলা এলাকার কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় সরাসরি কৃষক উপকৃত হবে, এ ছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে জলাধারের দু’ধারে লাগানো গাছ থেকে নানা ভাবে সুফল পাবে স্থানীয় বাসিন্দারা । নওগাঁর রানীনগর-আত্রাই আসনের সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম সাংবাদিকদের জানান, রক্তদহ বিল থেকে আত্রাইয়ের কাশিয়াবাড়ী পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার খাল খননের উদ্যেগে গ্রহন করা হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৯ সালে এই খালটি খনন করা হয়। তার পর থেকে এ খাল পূনঃখনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহাজোট সকরার ক্ষমতায় এলে ২০১২ সালে রক্তদহ বিল থেকে কাশিয়াবাড়ী পর্যন্ত খাল পূনঃ খননের উদ্যেগ গ্রহন করা হয়। গত দুই বছরে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার খাল পূনঃ খনন সম্পন্ন করেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী অর্থ বছরে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাষ্ট’ প্রকল্পের আওতায় বাকী ২ কিলোমিটার খাল পূণঃ খনন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। মোঃ ইসরাফিল আলম এমপি আরো বলেন, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য ভরাট হয়ে যাওয়া রক্তদহ বিলের পানি নিস্কাশনের খাল পূনঃ খনন কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এ বছর থেকেই রানীনগর-আত্রাই উপজেলার ৩০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার কৃষক ও মৎস্য জীবিদের জীবন মান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতী ও পরিবর্তন হবে, খালের দু’ধারে সামাজিক বনায়ান কর্মসুচির আওতায় সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার ফলে জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
Home / কৃষি সংবাদ / নওগাঁর রানীনগর-আত্রাইয়ে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে ৩০ গ্রামের মানুষ ॥ চাষাবাদের আওতায় আসবে ৪৫ হাজার বিঘা জমি!!
আরও পড়ুন...
নওগাঁর রাণীনগরে অভিযানে কারেন্ট-রিং জাল জব্দ ॥ জরিমানা আদায়
এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁর রাণীনগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ কারেন্ট ও রিং জাল দিয়ে …