গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। শামীম ওসমান বলেন, ২৯ এপ্রিল রাতে নূর হোসেন আমাকে ফোন করেছে। আমি তাকে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য বুঝালাম। আমি তাকে বলেছি তোমার তো অনেক টাকা-পয়সা আছে। তুমি সিনিয়র আইনজীবীদের মাধ্যমে কোর্টে আত্মসমর্পণ কর। আমি তাকে এই পরামর্শ দিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের এ সাংসদ বলেন, নূর হোসেনকে আমি বলেছি- তুমি যদি অপরাধ না করো তাহলে কোর্টে আত্মসমর্পণ কর। আমি যে সাজেশন দিয়েছি; সেটা কর। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে শামীম ওসমান সহযোগিতা করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের কথোপকথনের একটি অডিও। কথোপকথনের সেই অডিও সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওটা আমারই কণ্ঠ। এটা একটি গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড করা ফোনালাপ। কারণ টেলিফোন ট্র্যাকিং সাংবাদিকেরা করেন না, এটা করেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। আমার ফোনও সবসময় ট্র্যাকিং করা হয়। এটা জেনেও আমি ফোনে কথা বলি। প্রকাশিত ফোনালাপের পুরো কথা এখানে নাই। আংশিক আছে, আংশিক নাই। শামীম ওসমান বলেন, আমার সঙ্গে ফোনে নূর হোসেন কথা বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা জানতেন ওই সময় নূর হোসেন ধানম ি-৪ নম্বর রোডে আছেন। এ সময় শামীম ওসমান পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, তারা যদি জানতেন নূর হোসেন ধানম িতে আছেন, তাহলে তারা নূর হোসেনকে ধরলেন না কেন? অডিওর শুরুতে শামীম ওসমানকে সালাম দেন নূর হোসেন। তখন শামীম ওসমান বলেন, ‘খবরটা পৌঁছাই দিছিলাম, পাইছিলা?’ জবাবে নূর হোসেন বলেন, ‘পাইছি, ভাই।’ শামীম ওসমান বলেন, ‘তুমি চিন্তা করো না।’ নূর হোসেন এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাই, আমি লেখাপড়া করিনি। আমার অনেক ভুল আছে। আপনি আমার বাপ লাগেন। আপনারে আমি অনেক ভালোবাসি, ভাই। আপনি আমারে একটু যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’ জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘একটু সময় দাও। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।’ শামীম ওসমান ‘গৌর দা’ বলে এক লোকের সঙ্গে নূর হোসেনকে দেখা করতে বলেন। নূর হোসেনের কাছে শামীম ওসমান জানতে চান, ‘কোনো সিল আছে কি না। সিল থাকার কথা জানিয়ে নূর হোসেন বলেন, ‘আছে আছে, সিল আছে, কিন্তু যামু ক্যামনে? রেড অ্যালার্ট যে। শামীম ওসমান বলেন, ‘না কিছু নেই। মনে হয় না। তুমি আগাইতে থাক।’ নূর হোসেন তখন বলেন, ‘ভাই, তাহলে একটু খবর নেন। আমি আবার ফোন দেই।’ কথাবার্তার একপর্যায়ে শামীম ওসমান নূর হোসেনকে বলেন, ‘তুমি কোনো অপরাধ করো নাই। আমি জানি, ঘটনা অন্য কেউ ঘটাইয়া এক ঢিলে দুই পাখি মারতেছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র এবং ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। ৩০ এপ্রিল তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে র্যাব-১১’র কয়েকজন কর্মকর্তার সংশিষ্টতার অভিযোগ করেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর থেকেই নূর হোসেন পলাতক রয়েছেন। গত ২৮ এপ্রিল ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় নজরুলের ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইয়াছমিন বিউটি একটি মামলা দায়ের করেন । কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে ৬ জনের নাম উলেখ করে মামলায় আসামি করা হয় মোট ১২ জনকে। এ ঘটনার পর গত ৫ মে র্যাব-১১’র সদ্য সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেনকে অকালীন অবসর ও নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার এমএম রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।