17 Magh 1431 বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / বিনোদন / টুনটুনির বাসা

টুনটুনির বাসা

এনবিএন ডেক্স: রাফির বয়স ৫ বছর। সে এখনো স্কুলে ভর্তি হয় নেই। ওর বাবা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার। রাফির মা একজন গৃহবধূ। পাড়ার ছেলে-মেয়েদের সাথে টো টো করে সারাদিন কাটায়। ওদের বাড়ির দক্ষিণে বড় একটি পুকুৃর আছে। পুকুরের পাড়ে ছিটকিনি গাছের ঝাড়। ছিটকিনি গাছের ঝাড়টিকে মাতৃকোলের মত অাঁকড়ে ধরে রেখেছে বইন্যা লাটিম কদম সহ কয়েকটি বড় বড় গাছ রাফি সহ ওর খেলার সহপাঠিরা ছিটকিনি গাছের পাকা গোটা দিয়ে মাটির তৈরি খেলনা পাতিকে রং করে। ছিটকিনির পাকা গোটা ফাটালে রক্তের মত লাল রং বের হয়। রাফি সকালে একা একাই ছিটকিনির গোটা তুলতে গিয়ে দেখে ছিটকিনির ডাল পেঁচিয়ে ছোট্ট একটি অদ্ভুত বাসা। এরকম বাসা রাফি এর আগে কখনো দেখেনি। চিকন চিকন সুতার মত খড় কুটা দিয়ে তৈরি বাসা। রাফি কাকের বাসা দেখেছে। এই বাসা দেখে ভাবছে, কাকের বাসা তো কোন বাসাই না। কেমন জানি ডালপালা খড়কুটা দিয়ে এবড়ো থেবড়োর মত বাসা। যা রাফির একটুও ভাল লাগছে না। রাফি কৌতুহলি মন নিয়ে, ছোট্ট শরীরটিকে লুকিয়ে লুকিয়ে ছিটকিনি ডালের ফাঁক ফোকর দিয়ে বাসা পর্যন্ত পৌঁছেছে। রাফি উঁকি দিয়ে দেখে, কী চমৎকার গড়নের ছোট্ট দুটি পাখি। রাফি এরকম সুন্দর পাখি এর আগে কখনো দেখেনি। তাই রাফির মনে এই পাখির নাম জানার আগ্রহ জন্মে। ঝাড় থেকে রাফি বেরিয়ে এসে চিন্তা শুরু করল। এই পাখির কথা সহপাঠীদের কাউকে বলবে না। রাফি ঝাড়ের পাশে চুপটি মেরে বসে আছে। কিছু সময় পরে পাখি দুটি বাসা থেকে বেরিয়ে বাসার উপর উড়াউড়ি করছে। সাত পাঁচ ভাবছে। কীভাবে কী করা যায়। চট করে রাফির মনে উদয় হল , এই পাখি ও বাসা সম্পর্কে মুক্তি আপনি বলতে পারবে। মুক্তি রাফির ফুফাতো বোন। রাফি মুক্তিকে আপু বলতে পারে না। আপনি বলেই ডাকে। মুক্তি ছোট থেকেই রাফিদের বাড়িতে থাকে। মুক্তি রাফির চেয়ে অনেক বড়। মুক্তি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। রাফি দৌড়ে গিয়ে মুক্তিকে বলল, আপুনি আপুনি তুমি আমার সাথে একটু এসো তো। মুক্তি রাফিকে খুব আদর করে। মুক্তি রাফির কথা মত ওর পিছনে পিছনে গেল। গিয়ে দেখে ছিটকিনি গাছের ঝাড়ের উপর দুটো টুনটুনি পাখি উড়া উড়ি করছে। রাফি এক হাত দিয়ে মুক্তির হাতের আঙুল ধরে আছে। আরেক হাতের আঙুল উঁচিয়ে মুক্তিকে দেখাচ্ছে, আর বলছে আপুনি, আপুনি ঐ যে ঐ-ই দুটো পাখি-ই। রাফির ছোট পা দুটো উঠা নামার মাধ্যমে নাচানাচি করছে। ঐ পাখির নাম কি আপুনি? মুক্তি এক গাল হেসে, আরে গাধা এ তো মনে হয় একটা টোনা আরেকটি টুনি হবে। ওরা স্বামী -স্ত্রী। বাসার কাছে সারাক্ষণ ঘোরা ঘুরি করছে, তার মানে নতুন বাচ্চা ফুটাইছে। বাচ্চার কথা শুনে রাফির চোখ ছানাবড়া। আপুনি এরাই তো বাচ্চা, এদের আবার বাচ্চা কত্ত ছোট্ট! আপুনি তুমি কখনো টোনা টুনির বাচ্চা ধরছো? আরে রাফি কত দিন যে বাসা থেকে বাচ্চা চুরি করে নিয়ে এসেছি। আপুনি তুমি কি ওদের বাচ্চা এনে দিবে?। রাফি শোন আগে দেখতে হবে আসলে বাচ্চা আছে নাকি। যদি বাচ্চা থাকে, তাহলে একটা বুদ্ধি আছে। চল রাফি এখান থেকে দূরে যাই। ওরা বাসার উপর দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। সন্দেহ করবে। রাফি হেসে বলছে পাখিরা আবার কিছু বোঝে নাকি। রাফি শোন সন্তানের প্রতি মায়া মমতা সকল প্রাণীর-ই আছে। যখন ওদের বাসা থেকে বাচ্চা চুরি করে আনা হয়, ওরা কত যে কান্নাকাটি করে? আপুনি তুমি কেমন করে বোঝ? ওরা কান্নাকাটি করে। রাফি শোন পাখিদের বাসা থেকে বাচ্চা নিয়ে আসার পরে ওরা কয়েক দিন শুধু চেঁচামিচিঁ করে। আর এক ঝাড় থেকে আরেক ঝাড়ে ছুটে বেড়ায়। রাফি খুব নিচু স্বরে বলল, আপুনি তুমি একটা বার আমাকে বাচ্চা ধরে দাও তো। রাফি শোন সামনে আমার জে এস সি পরীক্ষা। এখন আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। তোর বাবা আমাকে বকবে। আমি যাই। রাফি মন খারাপ করে বলল, না আপুনি,তুমি যেয়ো না। কিছু সময় পরে বাড়ির ভিতর থেকে মুক্তির ডাক এলো। মুক্তির প্রাইভেট স্যার এসেছে। রাফিকে রেখে মুক্তি পড়তে গেল। রাফি মুক্তির পড়ার ঘরে বারবার যাওয়া আসা করছে। পড়া শেষ হল। আবার বায়না ধরলো, আপুনি চলো তো আবার একটু দেখে আসি। টোনা টুনি কী করছে? মুক্তি রাফিকে থামিয়ে বলল শোন বাসার আশে-পাশে বেশি ঘোরাঘুরি করা যাবে না। একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হবে। একটু পরে সন্ধ্যা নামবে। এখন আর ঝোপ ঝাড়ের কাছে যাওয়া যাবে না। অতএব এখন তোকে হাত মুখ ধুয়ে দিই। কাল সকালে একবার তোর সাথে গিয়ে দেখে আসব। ছেলেটার ছোট মনে শত প্রশ্ন জমতে শুরু করছে কীভাবে যে টোনা-টুনির বাচ্চা ধরে নিয়ে আসবে? বাচ্চা নিয়ে এসে কোথায় রাখবে? বাচ্চারা কি কি খায় ? এ রকম চিন্তা ও রাফির মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। পরেরদিন সকালে রাফি ঘুম থেকে উঠে মুক্তির কাছে গিয়ে বলল আপুনি চলো তো একবার টোনা-টুনির বাসা দেখে আসি। মুক্তি রাফিকে নিয়ে ছিটকিনি ঝাড়ের কাছে গেল। আবেগের স্বরে রাফি মুক্তিকে বলছে তুমি এখন-ই বাচ্চা এনে দাও না আপুনি। মুক্তি রাফিকে বলল শোন, ছিটকিনির পেঁচানো ডালের ভিতর দিয়ে আমি ঢুকতে পারব না। বরং ঝাড়ের ভিতর তোকেই ঢুকতে হবে। তুই ডালের ফাঁক ফোকর দিয়ে ঢুকে গিয়ে দেখে আয়,আসলেই বাসায় বাচ্চা আছে কিনা? যদি বাচ্চা থাকে ,তাহলে দেখে আসবি বাচ্চার পালক গজানো শুরু হয়েছে কিনা? যদি পালক গজানো শুরু হয়ে থাকে, তাহলে একটা বুদ্ধি আছে। রাফি মুক্তির কথা মত ঝাড়ের ভিতরে ঢুকে গেল । খুব সজাগ ভাবে বাসার কাছে পৌঁছেছে। মুক্তি রাফিকে শিখিয়ে দিয়েছে তোর শব্দ যেন বাচ্চারা না শুনতে পায়। বাচ্চারা যদি চ্যাঁচামিচিঁ শুরু করে দেয়,পরক্ষণেই মা পাখি মুখে পুরে বাচ্চা অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে। তাই সে খুব সর্তক হয়ে পেঁৗছেছে। জোরে নিশ্বাস নিতেও ভয় পাচ্ছে। চুপিসারে টোনা-টুনির বাসায় উঁকি দিয়ে দেখে কী অদ্ভুত ! ছোট্ট দুটি বাচ্চা । লাল টকটকে চামড়া। এখনো পালক উঠতে শুরু হয় নাই। উপরের দিকে ঠোঁট ফাঁক করে চ্যাও চ্যাও করছে। লোভ সামলতে পারছে না। ইচ্ছে হচ্ছে এখনই মুঠোয় পুরে বাচ্চা দুটিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু মুক্তি ওকে বারবার বলে দিয়েছে, তুই শুধু দেখে আসবি। তারপর আমি তোকে পরামর্শ দিব। রাফি বেরিয়ে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে মুক্তিকে বলল আপুনি ওখানে দুটা বাচ্চা আছে। তুমি এখনই বাচ্চা নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর। মুক্তি রাফিকে থামিয়ে বলল ,শোন ওখানে কী অবস্থায় দেখে এলি, তাই আগে বল। বাচ্চা সম্পর্কে খুটিনাটি সব বলল। মুক্তি সব শুনে বলল আজ থাক। তখনই রাফি বলল আজ থাকবে কেন আপনি? মুক্তি তখন বলল আজ যদি বাচ্চা নিয়ে আসিস তাহলে ওদের মা বেশি রাগ করবে। আর বাচ্চা ও তুই বাঁচাতে পারবি না। বরং কাল তুই সুতা দিয়ে বাচ্চার পা ডালের সাথে বেঁধে রেখে আসবি। দুদিন পরে সুযোগ মত বাচ্চা দুটো নিয়ে আসবি। মুক্তির কথা মত বাড়িতে গিয়ে সুতা খোঁজা খুঁজি করে সুতা কাছে রেখে দিল। ওর সময় আর যেতে চাইছে না। রাতে ঘুমানোর সময়ও সুতা কাছ রেখে দিয়েছে। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুক্তির কাছে পরামর্শ নিয়ে ছিটকিনি ঝাড়ের ভিতর ঢুকে বাচ্চার পা বেঁধে রেখে আসল। রাফি সারাদিন ঝাড়ের আশে-পাশে ঘোরাঘুরি করছে। দিন আর ফুরায় না। মন ও নজর আজ কোথায়ও নেই। শুধু টোনা-টুনির বাসার দিকে সব খেয়াল। দিন শেষ হলেই সন্ধ্যা। তারপর রাত। তারপর সকাল। এই ভেবে ভেবে ক্লান্ত। বিকেল চারটার দিকে রাফিদের বাড়ির দিকে একটি ভ্যানগাড়ি এলো। কিছু সময় পর এই গাড়িতে রাফির মা’কে তুলে নিয়ে পাশের গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে গেল। রাফির মা ডেলিভারি হবে। এসব বিষয়ে ছেলেটা আগামাথা কিছুই জানে না। রাফির মা চলে যাওয়ার পর মুক্তি রাফিকে কাছে কাছে রাখছে। সন্ধ্যা শেষে রাফির মা’কে ফেরত নিয়ে এলো। রাফির মা’কে শহরের ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শহরে যাওয়ার সময় রাফি ওর মায়ের সাথে যেতে চাইল। ওর বাবা মুক্তিকে ডেকে বলল তুমিও চলো আমাদের সাথে। শহরের হাসপাতালে গেল। রাতে রাফির মা এক রুমে ছিল, মুক্তি ও রাফি অন্য রুমে ছিল। পরের দিন সকালে রাফি মুক্তির সাথে ওর মায়ের কাছে গেল। গিয়ে দেখে ওর মা শুয়ে আছে,পাশে চাঁদের মত ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। মায়ের পাশে বাচ্চাটিকে দেখে ওর মনে হল, টোনা-টুনির বাচ্চাই বড় হয়ে ওর মায়ের কাছে এসেছে। মুক্তি রাফির বোনটিকে কোলে তুলে আদর করা শুরু করল। তখন রাফি মুক্তিকে বলল আপুনি আপুনি তুমি ওকে এখনি নিয়ো না। মা রাগ করবে তো। তখনি হাসপাতালে একরাশ হাসির রোল পড়ে গেল। চাঁদের কণার মত বোনটিকে টোনা-টুনির বাচ্চার কথা মনে আছে কিনা? কে জানে?

আরও পড়ুন...

নওগাঁর নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত!!

এনবিএন ডেক্সঃ ঈদ উপলে নওগাঁর মহাদেবপুরের ঐতিহ্যবাহী সাতরা বিলে অনুষ্টিত হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। উপজেলার …