18 Magh 1431 বঙ্গাব্দ শুক্রবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / সারাদেশ / ১৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা : জনজীবনে নাভিশ্বাস বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ

১৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা : জনজীবনে নাভিশ্বাস বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ

এনবিএন ডেক্স: তীব্র দাবদাহ আর আগুন ঝরা আবহাওয়ায় তেঁতে উঠেছে পুরো রাজশাহী। তীব্র দাবদাহে রাজশাহীবাসীর প্রাণ এখন প্রায় উষ্ঠাগত। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে সব বয়সী মানুষ। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা ততই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দিনভর সূর্যের তীর্যক রশ্মী আর লু হাওয়া, রাতে গোমট গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সবার। এক পশলা বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মত আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষসহ সমস্ত জীবজন্তু। এদিকে গতকাল বুধবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আবারও চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে বিবেচিত হয়েছে। এর আগে রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ২৭ এপ্রিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর ৯ মে আবারও ৪১ দশমিক ২ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। রাজশাহীর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে গতকাল বুধবারের তাপমাত্রা ১৪ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। ১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত কয়েকদিন থেকে অব্যাহত তাপপ্রবাহে এতবছর পর আবারও সে রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সবাই। তবে ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে রাজশাহী পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী আবহাওয়া কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, এবার রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কা কম। আগামী ২৭ মের পর দেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তাপমাত্রা কমবে। এ ক’দিনে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। টানা কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিপাত না হলে রাজশাহী অঞ্চলের এ দাবদাহ কমার সম্ভাবনা নেই। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম জানান, গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল সকাল ৬টায় ৯২ শতাংশ এবং বিকেল ৩টায় ২২ শতাংশ। পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি। এদিকে, সূর্যের তাপে শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুই মাস থেকে এক টানা খরপাতে পুড়ছে রাজশাহী। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করছে। এর আগে রাজশাহীতে গত মঙ্গলবার ৪০, সোমবার ৩৮ দশমিক ৭ এবং রোববার ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ফলে তীব্র দহনে তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে বরন্দ্রের মাটি। অব্যাহত তাপপ্রবাহে রাজশাহীর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা চরমে পেঁৗছেছে। অসহনীয় গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকোপ বেড়েছে বিভিন্ন রোগের। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গাছে আমগুটি ও লিচু শুকিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে। অপরদিকে গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী দুই মাস ধরে দেশের কোথাও-না-কোথাও তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল হাসান বলেন, এই তাপমাত্রায়ও সমস্যা হতো না, যদি প্রকৃতি অনুযায়ী মাঝেমধ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতো। কিন্তু তা না হওয়ায় ভূপৃষ্ঠে ক্রমপুঞ্জীভূত তাপ গরমের অনুভূতি অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি হলে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি অতিদ্রুত ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। লঘুচাপটি গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে অধিদফতরের এক বিশেষ বুলেটিনে একথা জানানো হয়।
বুলেটিনে আরো বলা হয়, নিম্নচাপটি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ -দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বুলেটিনে বলা হয়, নিম্নচাপটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। সাগর মাঝারী ধরনের উত্তাল রয়েছে। বুলেটিনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন...

নওগাঁয় সীমানা প্রাচীরের দ্বন্দে প্রাচীর ভাংচুর ও মারপিট

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁয় সীমানা প্রাচীরের বিরোধের জের ধরে ভোগদখলীয় সম্পত্তিতে নির্মাণাধীন ইটের সীমানা প্রাচীর ভাংচুর …