এন বি এন ডেক্সঃ রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে নওগাঁ জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটী রাজবাড়ীটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রানে- এসে দাঁড়িয়েছে। দেখার কেউ নেই বললেই চলে। প্রত্নতত্ব বিভাগ কয়েক বছর আগে সাইন বোর্ড লাগালেও তাদের কোন রক্ষনাবেক্ষন নেই। দীর্ঘদিন রাজবাড়ীটি ছিল পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্র। নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটি রাজবাড়ী। প্রায় দু’শ বছরের প্রাচীন এ রাজবাড়ী। দুবলহাটী রাজবাড়ী ওই বংশের বিভিন্ন পুরুষের সময়ে উন্নতি সাধিত হয়।
সূত্রে জানা গেছে, রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী ও তার পুত্র রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরীর সময় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় রাজ ষ্টেটের। তখন তাদের বার্ষিক আয় ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ৫ একর এলাকা জুড়ে বিশাল প্রাসাদ। আর প্রসাদের বাইরে ছিল দীঘি, মন্দির, স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৬ চাকার রথসহ বিভিন্ন স্থাপনা। রাজ প্রাসাদের সামনে রোমান স্টাইলের বড় বড় পিলার গুলো রাজাদের রুচীর পরিচয় বহন করে। ১৮৬৪ সালে রাজ পরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে স্কুলটি নাম করন হয় রাজা হরনাথ উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটিতে ইংরেজী পড়ানো হতো। প্রধান শিক্ষক ছিলেন একজন ইংরেজ। রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর প্রজা নির্যাতনের অনেক কাহিনীর পাশাপাশি আছে জনহিতকর ও সামাজিক কাজের অবদান। প্রতি বছর ষ্টেটের খরচে ৫ জন করে গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের লেখা-পড়ার ব্যবস্থা ছিল। ইতোমধ্যে দূর্বৃত্তরা প্রাসাদের লোহর বিম, ইট, দরজা জানালা, কড়ি-বর্গা খুলে নিয়ে গেছে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, রঘুনাথ নামের এক ব্যক্তি লবন ও গুড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি দিঘলী বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত খয়রা নদী দিয়ে নৌকা যোগে দুবলহাটিতে ব্যবসার জন্য আসেন (বর্তমানে নদীর অসি-ত্ব আর নেই)। তিনি প্রায় প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখতেন তাঁকে কে যেনো বলছে “তুই যেখানে নৌকা বেঁধেছিস সেখানে জলের নীচে রাজ রাজেশ্বরী দেবীর প্রতিমা আছে। সেখান থেকে তুলে স্থাপন কর।” রঘুনাথ একদিন ভোর বেলা জলে নেমে দেখলেন সত্যিই সেখানে রাজ রাজেশ্বরীর প্রতিমা আছে। তিনি প্রতিমাটি পানি থেকে তুলে একটি মাটির বেদী তৈরী করে প্রতিষ্ঠা করলেন। এরপর তাঁর ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে।
রঘুনাথের বিত্ত-বৈভবের খবর পৌঁছে যায় মোগল দরবারে। মোগল দরবারের নির্দেশে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ নবাবের দরবারে। নবাব তাঁকে রাজস্ব প্রদানের নির্দেশ জারি করেন। তিনি নবাবকে জানান তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে শুধু জল আর জল। কোন ফসল হয়না। তবে বড় বড় কৈ মাছ পাওয়া যায়। বিষয় বুঝতে পেরে নবাব তাঁকে প্রতি বছর রাজস্ব হিসাবে ২২ কাহন কৈ মাছ প্রদানের নির্দেশ দেন। দুবলহাটি রাজ প্রাসাদে সাড়ে ৩’শ ঘর ছিল। ছিল ৭টি আঙ্গিনা। প্রাসাদের ভিতর কোনটি ৩ তলা আবার কোনটি ছিল ৪ তলা ভবন। রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরীর নাতি ও কুমার অমরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরীর ছেলে দুবলহাটি রাজ পরিবারের ৫৪তম পুরুষ রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধূরী (৭২) জানান, দুবলহাটীর জমিদারী ছিল সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও ভারতের কিছু অংশে। ১টি গোল্ডেন সিলভার ও ১টি আইভরির তৈরী সিংহাসন ছিল। বৃটিশরা সিংহাসন দুটি নিয়ে যায়। হরনাথ রায় চৌধুরী প্রথম রাজা খেতাব পেয়েছিলেন। রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরী পিতা রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী অবসাদ যাপনের জন্য “রনবাগ” নামে একটি বাগানবাড়ি তৈরী করেছিলেন। প্রাসাদের ভিতরে ও বাইরে ছিল নাটক এবং যাত্রা মঞ্চ। নিয়মিত নাটক ও যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো। দুবলহাটি রাজবাড়ীটি একটি ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ী। এখনো এই স্থাপনাটি রক্ষা করলে দেশের একটি অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
আরও পড়ুন...
নওগাঁয় ভূমি সেবার উদ্বোধন
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ”নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি” এই প্রতিপাদ্যে নওগাঁয় তিনদিন …