20 Agrohayon 1431 বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / শিক্ষা / সিরাজগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্পে চলে অসামাজিক কার্যক্রম শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগের অবস্থায় নাজুক

সিরাজগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্পে চলে অসামাজিক কার্যক্রম শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগের অবস্থায় নাজুক

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: দারিদ্র জনগোষ্ঠী ও ভূমিহীন পরিবারকে পূনর্বাসনে সরকারের প্রতুশ্রুতির বাস-বায়িত আবাসন প্রকল্পগুলোতে অসামাজিক কার্যক্রম করার অভিযোগ রয়েছে অপর দিকে আবাসন প্রকল্প তৈরী করা হলেও গড়ে উঠেনিরাস-াঘাট সহ সুযোগ সুবিধা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি আশ্রায়ন ও আবাসন প্রকল্প এবং ন্যাশনাল প্রোজেক্ট ডাইরেক্টর থেকে আদর্শ গ্রাম ও গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পে বরাদ্দ হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার ক্ষতিগ্রস’,ভাসমান, ভুমিহীন ও আশ্রয়হীন পরিবারদের জন্য আবাসন , গুচ্ছগ্রাম, আশ্রায়ন, আদর্শ গ্রাম ও পুনর্বাসন প্রকল্পে শত শত নারী পুরুষকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। আশ্রিত পরিবারগুলো তাদের নির্দিষ্ট ঘর বরাদ্দ পেয়ে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে বেচে থাকার জন্য এ আবাসনগুলোতে বসবাস শুরু করে। কিন’ এসব আবাসনগুলোতে শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগের সঠিক ব্যবস’া এবং সরকারের যথাযথ নজর না থাকায় আশ্রিত পরিবারগুলোর অনেকেই চলে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট পুনর্বাসন, সয়দাবাদ পুনর্বাসন, শাহানগাছা আবাসন, ছাতিয়ানতলি আবাসন, ইতালি আশ্রায়ন, কানগাতি আশ্রায়ন, কানগাতি গারদহ আশ্রায়ন, ক্ষুদ্র কাটেঙ্গা আশ্রায়ন, কালিয়া চৌধুরী আদর্শ গ্রাম, ডুমুর আদর্শ গ্রাম, হরিণা গোপাল আদর্শ গ্রাম, বনবাড়িয়া আদর্শ গ্রাম ও বাঐতারা আদর্শ গ্রামগুলো সমাজ এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় অপরাধীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বসবাস করছে এবং মাদকের আখড়া গড়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রেভিনিউ শাখা থেকে জানা যায়, জেলায় আবাসন প্রকল্প ২৫টির মধ্যে ১৭টিতে পরিবার বসবাস করে। বাকি ৮টিতে কেউ বসবাস করে না। আদর্শ গ্রাম ফেস ১ ও ২ মিলে ৪০ টি। গুচ্ছ গ্রাম ৭ টির ভিতর ৩টি প্রক্রিয়াধীন এবং আশ্রায়ন প্রকল্প ১৭ টি। আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ২ শ ৪৭ টি। আশ্রায়ন প্রকল্পে বসবাসকারী পরিবার ৯শ ৭১ টি, আদর্শ গ্রামের ১ হাজার ৩শ ৩৫ টি এবং গুচ্ছ গ্রামে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১শ ৭০ টি। সূত্র আরও জানায়, সদর উপজেলায় আবাসন প্রকল্প ২ টি। ছোনগাছা ইউনিয়নের শাহান গাছা আবাসন প্রকল্পে ৩০ পরিবার ও সয়দাবাদ ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলি আবাসন প্রকল্পে ৫০ পরিবারকে বরাদ্দ দেয়া হয়। আশ্রায়ন প্রকল্প ৪ টি। ইতালি আশ্রায়ন প্রকল্পে ৬০ পরিবার, কানগাতি আশ্রায়ন প্রকল্পে ৬০ পরিবার, কানগাতি গারদহ আশ্রায়ন প্রকল্পে ২০ পরিবারের জন্য বরাদ্দ হয়। এবং ক্ষুদ্র কাটেঙ্গা আশ্রায়ন প্রকল্পে কোন পরিবার বসবাস করে না। আদর্শ গ্রাম ৫ টি। কালিয়া চৌধুরী আদর্শ গ্রামে ৩০ পরিবার, ডুমুর আদর্শ গ্রামে ৩০ পরিবার, হরিণা গোপাল আদর্শ গ্রামে ৩৮ পরিবার, বনবাড়িয়া আদর্শ গ্রামে ৭০ পরিবারকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এবং বাঐতারা আদর্শ গ্রামে কেউ বসবাস করে না। পুনর্বাসন কেন্দ্র ২ টি। শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট ও সয়দাবাদ পুনর্বাসন কেন্দ্র। এসব আশ্রমে অপরাধী, চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আখড়া গড়ে উঠেছে। ভুমিহীন ও আশ্রয়হীন পরিবারকে বরাদ্দ দিলেও তারা অনেকেই সেখানে থাকে না। জেলায় আশ্রায়ন প্রকল্প ফেস ২ এর ৮ টির একটিতেও পরিবার পুনর্বাসিত হয়নি। কারণ শুধু মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ঘর দরজা তৈরি করা হয়নি। সুত্র আরও জানায়, ২০১১-১২ অর্থ বছরে রায়গঞ্জ উপজেলার শিমলা পুর্ব পাড়া গুচ্ছ গ্রামের নতুন ঘর দরজা নির্মাণের জন্য ৪০ লাখ ৭৬ হাজার ৩শত, তাড়াশ উপজেলার বড়পোওতা গুচ্ছ গ্রামের জন্য ৫২ লাখ ২৮ হাজার ৯শত এবং শাহজাদপুর উপজেলার পাকুরতলা গুচ্ছ গ্রামের জন্য ৪০ লাখ ৫৬ হাজার ৩শত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। একই অর্থ বছরে আশ্রায়ন ফেস ২ প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ মেরামতের জন্য সদর উপজেলার ইছামতি আশ্রায়ন প্রকল্পে ২০০ মে.টন গম, রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যাম গোপ আশ্রায়নে ১২৭.৯৫ মে. টন গম এবং শাহজাদপুর উপজেলার পাকুরতলা ২২.৪২১ মে. টন চাউল, তাড়াশ উপজেলার বড়পোওতায় ৩৬.৯৪১ মে. টন চাউল বরাদ্দ হয়েছে। সরকার সঠিকভাবে ঘর বরাদ্দ দিলেও আবাসনে এক শ্রেণীর বসবাসকারীদের সহযোগিতায় দুস্কৃতিকারীরা সেখানে প্রবেশ করে অসামাজিক কার্যক্রম চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে সেখানকার পরিবেশ কলুষিত হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দিনের পর দিন বন্ধ থাকে আবাসনের কক্ষগুলো। এছাড়াও আবাসনগুলোতে নেই শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগের সঠিক ব্যবস্থা এ কারণেই চলে যাচ্ছে অনেক পরিবার। ফলে চোরাকারবারি, অপরাধী ও মাদকসেবিদের নিরাপদ স্থান হিসেবে সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে। অনেক পরিবার যমুনা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিস্ব হয়ে যায়। যমুনার করাল গ্রাসে অনেকে সহায় সম্বল হারিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বাঁধ কেউবা অন্যের জমিতে কোন রকমে ঘর কিংবা টং বানিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে বাধ্য হয়। কিন’ সরকার নদী ভাঙ্গা, ভাসমান ও আশ্রয়হীন মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়ার জন্য সিরাজগঞ্জ জেলায় আবাসনসহ বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে। কিন’ এসব আবাসনগুলোতে সঠিক শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগের কোন ব্যবস’া নেই। নাম মাত্র সুবিধাভোগী এসব পরিবারের মধ্যে সরকারিভাবে পরিবার পরিকল্পনা, সমাজ সেবা, পশুপালন, যুব উন্নয়ন ও মৎস্য বিভাগ থেকে লোন দেয়া হলেও সেটিও কোন কোন আশ্রয়ণে বন্ধ হয়েছে। সদস্যদের পুঁজি না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকেই চলে গেছে আবাসন ছেড়ে। আবার প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় এবং অসামাজিক কাজ প্রকাশ্যে ঘটায় সচেতন পরিবারগুলোও আবাসন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সমাজ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে এ প্রকল্পগুলো নির্মাণ করায় দূস্কৃতিকারীরা তাদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে। সরেজমিনে দেখা যায়, আবাসনগুলোতে বর্তমানে স্যানিটেশন ব্যবস’া ভেঙ্গে পড়েছে। টিউবয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। স্বাস’্য ব্যবস’াও হুমকির মুখে। আবাসনের ব্যারাকগুলোর ঘরের টিন মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। বর্ষাকালে ভিতরে পানি প্রবেশ করায় বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। আবাসনের অধিকাংশ ব্যারাকগুলোতে লোকজন না থাকায় চোরাকারবারী, অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়িদের নিরাপদ স’ান হিসেবে মদ, জুয়া, গাঁজা, ফেন্সিডিল, হিরোইন, নারী ব্যবসাসহ ভারতীয় অবৈধ শাড়ি কাপড়ের অবাধে ব্যবসা করছে। সদর উপজেলার কানগাতি আশ্রায়ন প্রকল্পে বসবাসরত কুলছুম বেগম জানায়, নলকুপ ও ল্যাট্রিন নষ্ট হয়ে গেছে। চালের টিনগুলো ফুটো হয়েছে। টিনের ওপর পলিথিন দিয়ে কোন রকমভাবে বসবাস করছি। ছাতিয়ানতলি আবাসন প্রকল্পের বৃদ্ধ আনিছুর রহমান জানায়, দির্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। সরকার আমাদের কোন খোজ রাখে না। আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনও হয় না। তারা মৎস্য শিকার, মাটির কাজ, দিন মজুর, রিক্‌্রা-ভ্যান চালিয়ে, ক্ষেত খামারের কাজ ও ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সমাজ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় আশ্রমগুলো তৈরি করার বিষয়ে সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) সেলিম আহমদ বলেন, আশ্রয় ও ভুমিহীন দরিদ্র হতদরিদ্র পরিবারের জন্য আবাসন হিসেবে সরকারি খাস জমি যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস’া করা হয়। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, পুনর্বাসিত পরিবারদের জন্য বর্তমানে সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ নেই। তাদেরকে সরকারিভাবে বিভিন্ন ঋণ সহায়তা দিলেও তা সঠিকভাবে তারা পরিশোধ না করায় সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ভুমিহীন ও আশ্রয়হীন পরিবাররা না থাকার বিষয়ে তিনি সঠিকভাবেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন’ ঘর-বাড়ি ও জমি হস-ান-র করার পর আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস’া নেয়া হবে বলে তিনি আরও বলেন, পুনর্বাসিত ঘর-দরজা সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস-াব পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন,পুনর্বাসিত এলাকাগুলোতে মাদক ব্যবসা, চোরাকারবারী, অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স’ল, মদ,জুয়া , গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন...

নওগাঁয় শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা সভা

এন বিএন ডেক্সঃ নওগাঁয় কোভিড-১৯ সময়ে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …