এন বি এন ডেক্স: নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের জনসাধারন ভাবতেও পারেনি একদিন শুকানো ক্যানেল গুলোতে সংরক্ষণ হবে পানি। উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খাস খাল-খাড়ি ও ক্যানেল। এ সকল খাড়ির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ কিঃ মিঃ। এ সব খাল-খাড়ি কালের বিবর্তনের ধারায় হারাতে বসেছিল তার স্বরূপ। সংস্কারের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল খাড়ির দুপাড়।বৃষ্টির পানি সংরক্ষন করা কিংবা জলাবদ্ধতার কবল থেকে আবাদী জমিকে রক্ষা করার মত ড্রেনেজ সিস্টেম ও ছিল না বললেই চলে। অথচ এ খাড়িতে একদিন দাপাদাপি করতো পাড়ার দুষ্ট ন্যাংটো ছেলের দল। দিনের প্রথমার্ধের কাজ শেষে কৃষক এ খাড়িতেই গোসল সেরে অবসন্ন দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরত খলই ভর্তি দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ নিয়ে। নৌকায় করে খাড়ি পথ দিয়েই এলাকার উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল চলে যেত খাড়ি দিয়ে মহাদেবপুরের আত্রাই নদী পথ হয়ে দেশের বিভন্ন জায়গায়। মৎসজীবীরা মৎস্য শিকার করে চালাতো তাদের সংসার। কিন’ শুধুমাত্র সংস্কারের অভাবে খাড়ি গুলো এতদিন হাজামজা হয়ে পড়েছিল। ঠিক এমনিই এক সময় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গত (২০০৬-০৭) অর্থ বছরে খাড়ি পুনঃ খনন কাজ শুরু করে এবং পাশাপাশি খাড়িতে নির্মাণ করা হয় ক্রসড্যাম। ফলে বিভিন্ন খালে বর্তমানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে এবং অতিরিক্ত পানি স্পিল ওভারের মাধ্যমে ছাতড়া ও মান্দা বিলে গিয়ে পড়েছে। এতে করে খাড়িতে সৃষ্টি হয়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৎস্য আহরণের সুযোগ, সৃষ্টি হয়েছে পাখ-পাখালীর অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত হচ্ছে জীব বৈচিত্র। এ ছাড়াও এলাকাটি থেকে হারিয়েছে মরুভূমির রক্ষতা। বিএএমডি এ নিয়ামতপুর জোন সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টির পানি সংরক্ষন ও সেচ প্রকল্পের আওতায় ১ম পর্যায়ে নিয়ামতপুর উপজেলায় ১৮৮কিঃমিঃ খাড়ি পুনঃ খনন করে ৮৫টি সাবমার্জডওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে এবং ১০২ টি খাস পুকুর পুনঃ খনন করা হয়েছে। এ সকল পুনঃ খননকৃত পুকুর ও খাল-খাড়ির সুফল বর্তমানে পাচ্ছে খাড়ি উপকুলীয় এলাকার কৃষক। উক্ত খাড়ির মাধ্যমে ১২০৯টি কৃষক পরিবার উপকার পাচ্ছে এবং খাড় সংলগ্ন ৭৮৫৬ হেক্টর জমিতে সম্পুরক সেচ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও ১০২টি খাস পুকুরে ১৯ মেট্রিকটন মৎস উৎপাদন হচ্ছে। ফলে মৎস চাষিরাও ফিরে পেয়েছে স্বনির্ভরতা। এ সব পুকুরও খাল খাড়ির উৎপাদিত মাছ দিয়ে এলাকার জনসাধারনের আমিষের চাহিদা পুরুণ হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা হয় সাবইল গ্রামের মহিলা চাষি রাশেদা বেগমের সাথে। তিনি জানান ইতিপূর্বে খাড়ি সংলগ্ন তার ২ বিঘা জমিতে পানির অভাবে আমন ধান প্রায় সময়ই মরে যেত এবং রবি মৌসুমে গম, সরিষা ও আলু চাষ করা সম্ভব হতো না। কিন’ বর্তমানে খাড়িতে পানি থাকার কারণে সেচ সহযোগিতা পাওয়ার তার জমিতে বিভিন্ন ফসল হচ্ছে। কথা হয় একই গ্রামের হামিদ আলী সাথে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে সে খাড়ির সংরক্ষিত পানি ব্যবহার করে গত আমন মৌসুমে সে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান করেছে এবং ৬ বিঘা জমিতে গম ও আলুর আবাদ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র খাড়িটি পুনঃখননেন ফলে। অপর কৃষক ইদ্রীস আলী জানান, খাড়ির পানিতে ফসল করলে উৎপাদন খরচ কম পড়ে এবং চলতি রবি মৌসুমে সে ৪বিঘা জমিতে গম ও সরিষার চাষ করেছে। যা খাড়িটি পুনঃখননেন পূর্বে সম্ভব হয়নি। তিনি এ খাড়ির পানি ব্যবহার করে অধিক ফসল ফলিয়ে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। বিএমডিএ নিয়ামতপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর ৩ কিঃ মিঃ খাড়ি ও ১টি সাবমার্জডওয়ার নির্মাণের কর্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। খাড়িটি পুনঃ খনন হলে খাড়ি উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা অধিক ফসল ফলিয়ে তারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। পাশাপাশি মৎস জীবীদেরও মৎস আহরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সেচ প্রকল্প ১ম পর্যায় শেষ হওয়ার পর ২য় পর্যায়ে চলতি বছরে ভাবিচা হরিপুর খাড়িটিতে ৩ কিঃ মিঃ পুনঃ খনন কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি শেষ হলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। তবে খাড়ির শেষের ৪কিঃমিঃ পুনঃ খনন করা হলে খাড়িটি সম্পূর্ণতা পেত। ওই এলাকার কৃষকদের দাবি খাড়িটি সম্পূর্ণতা পেত। ওই এলাকার কৃষকদের দাবি খাড়িটি সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যে (মান্দা বিল পর্যন-) পুনঃ খনন করে মান্দা বিলের সাথে সংযোগ দিতে হবে এবং খাড়িতে ৮/১০ টি সাবমার্জডওয়ার নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়াও জুলুপাড়া ঘাট হতে শিব নদী পর্যন- খাড়িটির অতি সত্ত্বর পুনঃ খননেন দাবি করেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন...
নওগাঁর রাণীনগরে অভিযানে কারেন্ট-রিং জাল জব্দ ॥ জরিমানা আদায়
এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁর রাণীনগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ কারেন্ট ও রিং জাল দিয়ে …