এনবিএন ডেক্স:বগুড়া পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী সুলতানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ৫০ বছরে পদার্পন করেছে। মহাস্থানে শায়িত মহা পুরুষ হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহী সওয়ার (রঃ) প্রথম বগুড়ার যে স’ানে পদার্পন করেন তাঁর নাম অনুসারে অত্র বিদ্যালয়ের নাম করণ করা হয় সুলতানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। তারই পবিত্র আত্মার স্মৃতি রক্ষার্থে এই পবিত্র পাদপীঠ, এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ইং ১৯৬২ সালে। চকলোকমান গ্রামের আলহাজ্ব আবুল আহম্মেদ তদান-ীতন সুলতানগঞ্জ কাম মাঝিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। তার পুরষ্কারের ৬০০০/-টাকা দ্বারা এবং তাঁর দানকৃত ৪.৩৬ একর জমির উপর গড়ে উঠে এই প্রতিষ্ঠান।
সুচনালগ্নে গন্ডগ্রাম, লতিফপুর, চকলোকমান, ফুলদিঘী, ফুলতলা, মালতিনগর, মালগ্রাম, বেতগাড়ি, বেজোড়া, আশেকপুর, সুজাবাদ সহ মাঝিড়া এলাকার জনসাধারন একযোগে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিভিন্নভাবে সাহায্যে করেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬২ সাল হইতে জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে উপ-পরিচালক কর্তৃক মুজ্ঞুরিপ্রাপ্ত হয়। ১৯৬৪ সালে নবম শ্রেনী এবং ১৯৬৫ সাল হতে ১০ম শ্রেনীতে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড কর্র্তৃক মুজ্ঞুরিপ্রাপ্ত হয়। এই বিদ্যলয়টিতে সুচনালগ্ন হতে প্রথম শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন- ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। ইং ১৯৬৬ সাল হতে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এস, এস, সি পরীক্ষায় সুনামের সহিত ফলাফল করে আসছে। ২০১১ সালে এস, এস, সি পরীক্ষায় পাশর হার ছিল ৯৬.৪২%। এদর মধ্যে ০৮ জন গোল্ডেন এ প্লাস সহ ১৫ জন এ প্লাস পায়। এছাড়া ২০১১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় একজন এ প্লাস সহ পাশের হার ছিল ৯৯% এবং ২০১১ সালে জে, এস, সি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৯৬%। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ। পরবর্তীতে কাজী জিল্লুল বারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস’ায় বিগত ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদৎ বরন করেন। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির ২ জন সদস্য যথাক্রমে গোলাম হায়দার ও আলতাফ উদ্দীন সরদার ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদৎ বরন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে শহীদ হয়। যুদ্ধোত্তর বিদ্যলয়টির ধ্বংসাবশেষ শিক্ষকদের আর্থিক সহযোগিতায় পুনঃ নির্মান করা হয়। এখনো বিদ্যালয়টিতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্বল্পখরচে লেখাপড়া করার সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে।
১৯৯২ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় “ডাবল শিফট” চালু করা হয়। প্রভাতি শাখায় ছাত্র এং দিবা শাখার ছাত্রীরা পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রথম শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন- উভয় শিফ্টে ১৩৬৫ জন। বর্তমান শিক্ষক/শিক্ষিকা ও কর্মচারীর সংখ্যা ২৯ জন। এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায়, কৃষি, গার্হস’্য, কম্মিউটার ও বিজ্ঞান বিভাগ সহ আধুনিক শিক্ষার সকল সুযোগ বিদ্যমান। এই স্কুলে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, বিজ্ঞানাগার ও কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নামাজ আদায় করার জন্য একটি নামাজ ঘর ও ক্যান্টিন আছে।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় ব্যপক সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০৪ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত ৩৪ তম জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা শীতকালীন প্রতিযোগিতার ক্রিকেট ইভেন্টে এই স্কুলের ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়া বিবিসি আয়োজিত ২০০৮ ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড জাতীয় স্কুল ক্রিকেটে বগুড়া জেলা পর্যায়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০৫ সালে ভলিবল বালক দল উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশী ছাত্রীরাও খেলাধুলায় পিছিয়ে নেই। তারা ২০১১ সালে ৪০ তম জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা গ্রীষ্মকালীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কাবাডি (বালিকা) ইভেন্ট বগুড়া জেলা পর্যায়ে রানার্স আপ এবং ২০০৫ সালে শাজাহানপুর উপজেলা বালিকা হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা অনুশীলনের জন্য বিশাল একটি মাঠ আছে।
বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছাত্র/ছাত্রীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। ২০০৭ সালে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১১ সালে নৃত্য ও দেশাত্ববোধক গান প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে যৌন হয়রানির ক্যাম্পিং -এ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে রানার্স আপ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা ও শৃঙ্খলা শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে বি,এন,সি,সির একটি প্লাটুন, কাব, বয় স্কাউট এবং গার্লস-ইন-স্কাউট এর একটি করে ইউনিট আছে। যা শিক্ষা উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে। বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী এখান থেকে পাশ করে সমাজের উচ্চতর পর্যায়ে আসিন হয়েছেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল মোস-ফা অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে বগুড়া জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। এই প্রতিষ্ঠানে এ যাবৎ ৬ জন প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের মধ্যে মোঃ আব্দুল বাছেত ২০০৫ সালে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। তিনি ৩৮ বছর অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী আবু জাফর সিদ্দিক রিপন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আছেন আলহাজ্ব আবুল আহমেদ এবং দাতা সদস্য আলহাজ্ব মোবারক আলী বিশা। তারা সহ ম্যানেজিং কমিটির অন্যতম সদস্য মোঃ জিন্নুরাইন জিন্নাহ, আলহাজ্ব আঃ সামাদ, সাহেবের সঠিক দিক নিদের্শনায় বিদ্যালয়ের সুনাম উত্তরত্তোর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যালয়ের বতর্মান সুযোগ্য প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ রেজাউল মোস-ফা সাহেবের নেতৃত্বে একঝাঁক তরুন ও অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীর নিরলশ পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে।
আরও পড়ুন...
খেলাধুলার চর্চা বাড়ানোর আহবান খাদ্যমন্ত্রীর
এনবিএন ডেক্সঃ মাদকমুক্ত যুবসমাজ গঠনে খেলাধুলার চর্চা বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। শুক্রবার বিকালে …