8 Kartrik 1431 বঙ্গাব্দ বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / জাতীয় সংবাদ / এক শিশুসহ তিন বাংলাদেশিকে অপহরণের ঘটনায় বিএসএফ আতংকে হাতীবান্ধা সীমান্তের কৃষকরা: ফেরত দেয়নি সাদেকুলকে: পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবরে পিতার আবেদন

এক শিশুসহ তিন বাংলাদেশিকে অপহরণের ঘটনায় বিএসএফ আতংকে হাতীবান্ধা সীমান্তের কৃষকরা: ফেরত দেয়নি সাদেকুলকে: পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবরে পিতার আবেদন

মঞ্জুরুল ইসলাম-মঞ্জু
(কালীগঞ্জ,লালমনিরহাট) থেকে:

চলছে ইরি-বোরো মৌসুম। ব্যাস- হয়ে পড়েছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। এমনি সময় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার প্রায় ৩২ কি.মি এলাকাজুড়ে ভারতের কাঁটাতার বেষ্টিত কৃষকদের দুশ্চিন-ার শেষ নেই। কারণ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এক শিশুসহ তিন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। তাই বেড়া সংলগ্ন জমিতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই। বিজিবির পক্ষ থেকে কৃষকদের আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও মনের ভয় কাটিঁয়ে উঠতে পারচ্ছেন না সীমান-বর্তী কৃষকরা। বুধবার সরেজমিনে সীমান-বর্তী গ্রামগুলো ঘুরে এমনি আতংকের কথা জানান অনেক কৃষক। সেই সাথে অপহৃতদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে হাতীবান্ধার আকাশ-বাতাস।
এদিকে গত সোমবার সকালে উপজেলার গেন্দুকুড়ি সীমান- থেকে সাদেকুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিজিবির প্রতিবাদ, ফেরত চেয়ে পত্র প্রেরণ এমনকি পতাকা বৈঠকের পরেও তাকে ফেরত দেয়নি বিএসএফ। ধৃত সাদেকুলকে বিএসএফ শীতলকুচি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে বলে বিজিবি সুত্রে জানা গেছে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার সাদেকুলের বৃদ্ধ পিতা সৈয়দ আলী হাতীবান্ধা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি বরাবরে আবেদন করেছেন। আবেদন পত্রটি( স্বারক নং-১৪৩/০৮/০২/২০১২) লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান হাতীবান্ধা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান।
মাত্র তিন মাস আগে দুদিনের ব্যবধানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র অবুঝ শিশু বিষাদ ও যুবক ফজলুল হক ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। আজও তাদের ফেরত দেয়া হয়নি। এর রেষ কাঁটতে না কাঁটতে গত সোমবার সকালে নিজ জমিতে সেচ কাজে গেলে সাদেকুল নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে একইভাবে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় বিএসএফ। এভাবে একের পর এক বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিএসএফ আতংকে ভুগছেন সীমান-বর্তী কৃষকরা। হাতীবান্ধা উপজেলার প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে রাখা ভারতের কাঁটাতারের বেড়া এখন ওইসব গ্রামের বাসীন্দাদের কাছে আতংকের মূর্তমান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেড়া সংলগ্ন জমিতে এসব এলাকার মানুষজন কৃষিকাজে যেতে ভয় পাচ্ছে। বিশেষ করে অবুঝ শিশুরা খেলার ছলে কাঁটাতারের ধারের কাছে যেন না যায়, সে ব্যাপারে নিবিড় নজরদারি করছেন অভিভাবকরা।
বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিড়পাড়া, বড়খাতা, সিংঙ্গীমারী, টংভাঙ্গা, গোতামারী ও ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন ভারতের কাঁটাতারে বেষ্টিত। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কি.মি. উত্তরে ফকিরপাড়া ইউ,পি থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ পূর্ব অংশের ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন অবধি প্রায় ৩২ কি,মি ভারতের বেড়া ঘেঁেষ রয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গ্রাম। বেড়া সংলগ্ন জমিতে চাষাবাদ করে চলে অনেকের জীবন-জীবিকা। আগে কখনো ওই জমিতে যেতে তাদের ভয় হতো না। কিন’ শিশু বিষাদ, যুবক ফজলু আর ছাদেকুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আতংকে জমিতে যেতে চাচ্ছেন না অনেকেই।
গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া সীমানে-র ৯০৩ মেইন পিলার সংলগ্ন বাসীন্দা ছোটন প্রামানিক(৩০), সফুর আলী(৪২)সহ একধিক ব্যাক্তি যুগান-রকে বলেন, মাত্র তিন মাস আগে পাশ্ববর্তী জাওরানী গ্রামের অবুঝ শিশুকে বিএসএফ ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হলে শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখছেন তারা। গত সোমবার সাদেকুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় পর থেকে বেড়া ঘেঁষা আবাদি জমিতে যেতে সাহস হয়না তাদের। রোজ রাতে দুঃশ্চিন-ায় ভালমতো ঘুমাতেও পাড়েন না অনেকেই।
একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম(৬০) বলেন, বাড়ির অদূরের কাঁটাতার চোখে পড়লে বুঁক কেঁপে ওঠে তাঁর। কারণ না বুঝে ওই বেড়ার কাছে যাওয়ার অপরাধে বিষাদের মতো অবোধ শিশুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা আঘাত হেনেছে তাঁকে।
হাতীবান্ধা সীমান-বাসীদের চোখের সামনের দৃশ্যত কাঁটাতার নামক আতংকের অভিন্ন রূপ লক্ষ্য করা যায়, জাওরানী, বনচৌকী, গেন্দুকুড়ি, সিংঙ্গীমারী ও বড়খাতা বিজিবি ক্যাম্পের আশপাশের বাসিন্দাদেরও মাঝে। লোকজনের মতে, সমপ্রতি বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা এলাকায় টহল বাড়িয়ে দিলেও ভয় কাঁটছে না তাদের। এসব ক্যাম্পের বিপরীতে ভারতের সাংগাপাড়া, ভবেরহাট, ফুলবাড়ি, গাছতলা, মিরাপাড়া,কাসাপাড়া, রড়মরিচা ও পাগলীমারী বিএসএফ ক্যাম্পের জওয়ানদের কঠোর তৎপরতাও তাদের নজরে পড়ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
সিংঙ্গীমারী সিমানে-র আশরাফ আলী(৩৭), আসাদুল(৩২), টংভাঙ্গার কানিপাড়ার হাচেন আলী(৪০), নুরমোহাম্মদ(৩৮) জানান, আগে তাদের গবাদিপশুদের কাঁটাতারের পাশেই ঘাঁস খেতে নিয়ে যাওয়া হতো। এখন আর কেউ যায় না। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, যদি বিএসএফ এসে ধরে নিয়ে যায়! তবে হাতীবান্ধা সীমানে-র সংশ্লিষ্ট বিজিবি ক্যাম্পের প্রধানরা পরিসি’তি মোটামুটি ভাল বলে দাবি করেন। সেইসাথে অনাকাংখিত ঘটনা ঠেঁকাতে তাদের নিয়মিত টহল আরও জোরদার করেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বিজিবির এক হাবিলদার বলেন, কৃষকরা যাতে নির্ভয়ে বেড়া সংলগ্ন জমিতে চাষাবাদ করতে পারেন সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে বিএসএফকে সচেতন করা হয়েছে।
অপরদিকে শিশু বিষাদ, যুবক ফজলু আর ছাত্র সাদেকুলের হতভাগ্য বাবা-মায়ের আহাজারি আর আর্তনাতে ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে হাতীবান্ধার আকাশ-বাতাস। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে অবুঝ শিশু বিষাদের অভাগিনী মা শানি- বালা অসুস’্য হয়ে পড়েছেন। যুবক ফজলুল হকের বৃদ্ধা বাবা ছকির উদ্দিনও অসুস’্য। মা রমিচা বেগম সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে দিনাতিপাত করছেন। একই অবস’া সাদেকুলের পরিবারেও। বাবা সৈয়দ আলী এমনি দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিস রোগে ভুগছেন। মা মাজেদা বেগম সন-ানের ছবি নিয়ে কেঁদে চলেছেন। তিন পরিবারের কান্না সরকার বা মানবাধিকার কোন সংগঠনের কাছে না পৌঁছলেও হাহাকার আর আর্তনাতে শোকের সাগরে ভাসছে পরিবারগুলো।
প্রসংঙ্গত, গত ৪ নভেম্বর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার জাওরানী সীমানে-র ৯০৯নং মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকায় ছাগল আনতে গেলে শিশু বিষাদ ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমন-রক্ষী বাহিনী। এর আগে ২ নভেম্বর রাতে সিংঙ্গীমারী সীমানে-র ৮৯৩নং মেইন পিলারের সাবপিলার ০৭ সংলগ্ন এলাকা থেকে ভারতের ফুলবাড়ী ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা ফজলুল হক (৩৫) নামের এক যুবককে ধরে নিয়ে যায়। পরে বিএসএফ তাদের ভারতের সংশ্লিষ্ট থানায় হস-ান-র করে। থানা কর্তৃপক্ষ ফজলুকে(৩৫) কোচবিহার জেলে আর শিশু বিষাদকে(৯) জলাপাইগুড়ি শিশুজেলে প্রেরণ করে। সবশেষ গত সোমবার সকালে একই উপজেলার গেন্দুকুড়ি সীমানে-র ৮৯৮ পিলার সংলগ্ন জমিতে সেচ দিতে গেলে হাতীবান্ধা সিনিয়ার মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী সাদেকুলকে ধরে নিয়ে যায় ভারতের মিরাপাড়া পাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা।

আরও পড়ুন...

নওগাঁর নিয়ামতপুরে সমতল আদিবাসীদের মিলন মেলায় ঐতিহ্যবাহী সাঁওতালী নৃত্য প্রতিযোগিতায় আদিবাসীরা মানুষ হয়েছে, আদিবাসীরা পুরোপুরি মানুষ না হলেও বারো আনা মানুষ হয়েছে ————————————–খাদ্যমন্ত্রী

এন বিএন ডেক্সঃ  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অর্থাৎ আদিবাসীরা মানুষ হয়েছে, তবে পুরোপুরি মানুষ না হলেও বারো …