এনবিএন ডেক্সঃ ‘দিনমান জাল খ্যায়ে দেড় থ্যাকা দুই কেজি মাছ ওটে। তাও আবার বছরে তিন থ্যাকা চার মাস মাছ ধরা যায়। শীত পড়তে পড়তে বিল শুক্যা যায়। দিনপদ চলা এখন কটিন হছেরে বা।’ এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন নওগাঁ সদরের দীঘলী বিলে মাছ মারতে আসা বৃদ্ধ সন্তোষ। নদী নালা খাল বিলগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে নওগাঁর মৎস্যজীবীরা। জলাশয় গুলো প্রতি বছর খরা মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। মাছের জন্য প্রসিদ্ধ নওগাঁ জেলার হাট-বাজারে আগের মত আর দেশীয় মাছ পাওয়া যায়না। বর্ষা মৌসুমে মুক্ত জলাশয়ে সামান্য কিছু মাছ ছাড়া হলেও দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের প্রজননও ব্যহত হচ্ছে। বাজারে এখন পাওয়া যায় মৎস্য খামারে উৎপাদিত মাছ। সেইসব মাছের দামও সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মুক্ত জলাশয় গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মৎস্যজীবী কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। নওগাঁ জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক সময় মাছের অভয়ারন্য নওগাঁর দীঘলি, সাঁতরা, মনছুর, গুটিয়া, রক্তদহ, জবই, ঘুকশী, ফলিমারাসহ নওগাঁর বড় বড় বিলগুলোতে বোরো মৌসুমে কৃষকরা যে কীটনাশক ব্যবহার করে পরবর্তীতে তার প্রভাব পড়ে মাছের উপর। যে সময় মা মাছ রেনু ছাড়ে ঠিক ওই সময়ই কীটনাশকের প্রভাবে রেনু নষ্ট হয়ে যায়। এলাকার হাট বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মুক্ত জলাশয়ের মাছ দু’একজন জেলে বাজারে নিয়ে এসেছেন। তা যেন সোনার হরিণ। বাজারে ঢেলা, মলা, টেংরা, শিং, কৈ, মাগুরসহ কিছু মাছ দেখা গেলেও সেগুলো বিভিন্ন মৎস্য খামারে উৎপাদিত। এসব মাছ বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। বাজারে, প্রতি কেজি মলা (ময়া) ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’, টেংরা ৩’শ থেকে ৪’শ, শিং ৬শ থেকে ৭শ’, মাগুর ৭শ থেকে ৮শ’, ষাটি (টাকি) ২শ থেকে ২শ’ ৫০, ফলি ৪শ থেকে ৪শ’ ৫০ ও গুচি ২শ’ ৫০ থেকে ৩’শ ৫০ টাকা দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে চোখে পড়েনি গজার, নুনা (ভেদা) মাছ। মাছ বিক্রেতা রহমত ও কালাম জানান, দেশী মাছের চাহিদা বেশী কিন’ জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ার ফলে মাছের উৎপাদন নেই। দেশীয় মাছ পাওয়া এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই দামতো একটু বেশী হবেই। নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, নওগাঁয় ছোট বড় মিলে ৪৪টি বিলকে সংস্কার করার জন্য প্রস-াবনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় আসছে বছর এসব বিল ও জলাশয়গুলোকে সংস্কার করে আবারো মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সদরের হাসাইগাড়ী গ্রামের মৎস্যজীবী জুয়েল ও শ্যাম জানান, বিল গুলোতে আগের মত আর মাছ পাওয়া যায়না। তাঁরা দু’জনেই মাছ ধরে শুটকী করে বিক্রি করেন। রোদ থাকলে মাছ শুকোতে ৩/৪ দিন সময় লাগে। নীলফামারী ও সৈয়দপুরের শুটকী মাছের আড়তে মাছ বিক্রি করেন। প্রতি কেজি ১৩০/- থেকে ১৫০/- টাকা দরে বিক্রি হয়। শুটকী করতে লবন প্রয়োজন হয়। সব খরচ মিটিয়ে যা থাকে তাদিয়ে কোন ভাবে সংসার চলে। বিল শুকিয়ে গেলে কৃষি মজুর হিসাবে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন তাঁরা। নওগাঁর বৃহত্তম বিল সাতরা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, নদী শাসন আইনসহ শুকিয়ে যাওয়া বিল গুলোকে খনন করা না হলে মাছের সংকট আরো প্রকট হবে । বাজারের বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাসসহ যেসব মাছ বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশ আমদানি করা হয় দক্ষিনাঞ্চল থেকে। তিনি জানান প্রায় আঠারো থেকে কুড়ি হাজার মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব পরিবারগুলো। এলাকার খাস জলাশয়গুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় দিন দিন কর্মহীন হয়ে পরছে মৎস্যজীবীরা। তাদের অনেকেই এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য রিক্সা ভ্যান চালানো, কৃষিকাজ, মৎস্য খামারের কাজ ও দিন মজুরের কাজ করে। #
আরও পড়ুন...
নওগাঁর রাণীনগরে অভিযানে কারেন্ট-রিং জাল জব্দ ॥ জরিমানা আদায়
এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁর রাণীনগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ কারেন্ট ও রিং জাল দিয়ে …