সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠে কৃষকরা এখন সরিষা ও ভুট্টা চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও কৃষকরা সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় মাঠে মাঠে সরিষা বপন ভুট্টা রোপন করতে শুরু করেছে। কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ জমিতে সরিষা বপন ও ভুট্টার রোপন কাজ শেষ হয়েছে। চলনবিলে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা ও ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। চলনবিলের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৬ বছর ধরে চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার কারণে সরিষার চাষ করা সম্ভব হয়েছে বলে ধাপতেতুলিয়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান। চলনবিলের ইতিহাসে কখনো সরিষার চাষ হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে বন্যার পানি কম, ও দ্রুত পানি মাঠ থেকে নেমে যাওয়ার ফলে সরিষার আবাদ করা সম্ভব হয়েছে বলে ঐ কৃষক বলেন। চলনবিলে সরিষার চাষের ফলে কৃষকদের নতুন একটি ফসল যোগ হয়েছে। সরিষার পাশপাশি গত বছর বাম্পার ভুট্টার আবাদ হওয়াতে এ বছর কৃষক ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। কিন’ সরিষা চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা পোকার আক্রমণে গত দু’বছর দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। কিন’ ভুট্টা চাষে সরিষার মতো এত রোগবালাই নেই। ফলে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ঐ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ এসে পোঁকার সিমটন দেখেও তা দমনে তাৎক্ষণিক কার্যকর কোনো ব্যবস’া গ্রহণ করতে না পারায় সরিষা চাষ করে প্রতি বছরই কৃষকদের আতঙ্কে থাকতে হয়। অপরদিকে গত বছর ধরে চলনবিলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়াতে কৃষকরা দিনদিন ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে বোরো ধানের আবাদও অনেকাংশে কমে গেছে। বিস-ীর্র্ণ চলনবিল এক সময় আমন ধানের সবুজ শীষে বাতাস দোল খেতো, অথৈই পানিতে মাছে ভরপুর থাকতো, বন্যা বেশী হলে ঢেউয়ের আঘাতে ঘরবাড়ি ভেঙে যেতো। আবার আরেক সময় সরিষার হলুদ ফুলে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠতো চলনবিল। প্রকৃতির এ লীলা খেলা বোঝার সাধ্য কারো নেই। তারপরও চলনবিলের মানুষ পানি, খরা, আর পোকার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে। লালুয়ামাঝিড়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের জানান, সারের দাম আনুপাতিক এ বছর একটু বেশী থাকায় চলতি বছরে সরিষার চাষ অনেকটাই কমে যাচ্ছে বাড়ছে ভুট্টা চাষ। অপর দিকে কৃষকদের সরিষা, ভুট্টা, রসুন, পেঁয়াজ, আলু চাষে উপজেলা কৃষি অফিস ব্যাপকভাবে সচেতনের মাধ্যমে আগ্রহ ফিরে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চলনবিলে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সরিষার বীজ, সারসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার দেওয়া হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। স্বল্পখরচে সরিষা ও ভু্ট্টা চাষে কৃসকদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন বলে উপজেলা কৃষি অফিসার মিজানুর রহমান জানান। তিনি আরো জানান, বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন যাতে কৃষকদের কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়। চলনবিলে গতবছর প্রতি বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৬ মন হারে সরিষা এবং ৩২ থেকে ৩৮ মণ হারে ভুট্টার ফলন হয়েছে। সরিষা চাষের ফলে ঐ জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলনও হয়। আর ভুট্টার আবাদ করার পর সেই জমিতে পাটের চাষ করা হয়। বর্তমানে এ লাভজনক সরিষা ও ভুট্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছেন।
আরও পড়ুন...
নওগাঁর রাণীনগরে অভিযানে কারেন্ট-রিং জাল জব্দ ॥ জরিমানা আদায়
এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁর রাণীনগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ কারেন্ট ও রিং জাল দিয়ে …