এনবিএন ডেক্স: ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় অগ্রণী ব্যাংক লি: কশব শাখা নওগাঁর মান্দায় বহুল আলোচিত কথিত ডাক্তার চিত্তরঞ্জনের বিষয় সম্পত্তিসহ বিশাল অট্টালিকা নিলামে তুলেছে। ব্যক্তিগত জামিননামা ও এফিডেভিটের ক্ষমতাবলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কথিত ডাক্তার চিত্তরঞ্জন প্রামানিক উপজেলার ছোট চকচম্পক গ্রামের মৃত হৃদয়কৃষ্ণ প্রামানিকের ছেলে। প্রতারনার মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় পাওনাদারদের ডজনখানেক মামলা মাথায় নিয়ে তিনি নওগাঁ জেলহাজতে রয়েছেন। তার বিষয় সম্পত্তি নিলামে ওঠায় প্রায় সহস্রাধিক পাওনাদার হতাশ হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, কথিত ডাক্তার চিত্তরঞ্জন প্রামানিক মেসার্স দিপালী ফার্মেসী, প্রোঃ শ্রী নিত্য গোপাল প্রামানিকের এক একর ২২ শতক সম্পত্তি ও তিনতলা বিশিষ্ট ২টি বাসভবনের বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কশব শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সুদাসলে ওই ঋণ বর্তমান ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৭৫ টাকা হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বারবার তাগাদা সত্বেও দীর্ঘদিনেও তিনি উক্ত টাকা পরিশোধ করেন নি। এতে তিনি ঋণ খেলাফির তালিকাভুক্ত হন। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কশব শাখা ব্যবস’াপক মাহবুবুর রহমান জানান, ব্যক্তিগত জামিননামা ও এফিডেভিটের ক্ষমতাবলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলেছে। অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২ ধারা বিধানে অর্পিত ক্ষমতায় এই নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে তিনি জানান। গতকাল সোমবার সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল তিনটি অট্টালিকার প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। এক সময় যে বাড়িটি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যনত সরগরম থাকত, সে বাড়িতে এখন ভুতড়ে অবস’া বিরাজ করছে। বাড়িতে চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী দিপালী রানী ও মেয়ে রেখা অবস’ান করছেন। বাড়িতে এখন কোন কেয়ার টেকার নেই। প্রতিবেশি ভ্যানচালক জনৈক লোকমান আলীর স্ত্রী কমেলা বিবি তাদের দেখাশোনা করেন। সাংবাদিক পরিচয়ে তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা রাজি না হয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। পাওনাদার ইয়াকুব আলী, আব্দুল গফুর, ফজলুর রহমান, ডিলার নজরম্নল ইসলাম, আব্দুল মালেক, একরামুল হকসহ আরো অনেকে জানায়, উপজেলার ছোট চকচম্পক গ্রামের পলস্নী চিকিৎসক কথিত ডাক্তার চিত্তরঞ্জন প্রামানিক এলাকায় ধনকুবের নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি নিজ এলাকাসহ উপজেলার কশব, কাঁশোপাড়া, মৈনম, প্রসাদপুর, বিষ্ণুপুর, নুরম্নল্যাবাদ, কালিকাপুর, কুসুম্বাসহ রাজশাহীর বাগমারা ও মোহনপুর, নওগাঁর নিয়ামতপুর, আত্রাই, রানীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের কাছ থেকে চড়া সুদের বিপরীতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। রাতারাতি বনে যান অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক। গড়ে তোলেন প্রাসাদসম তিনটি বিশাল অট্টালিকা। এক পর্যায়ে উঠে আলোচনার ঝড়। শুরম্ন হয় কানাঘুষা। সাধারন মানুষের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনও অনুসন্ধানে নামে। বেরিয়ে আসে ডাক্তারী পেশার পাশাপাশি পিতা-পুত্রের দাদন ব্যবসার নানান ধরনের কাহিনী। সুত্র ধরে থানা পুলিশ ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল কথিত ডাক্তার চিত্তরঞ্জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। হাজত থেকে জামিনে আসার পর পাওনাদাররা টাকা ফেরত নিতে তার বাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। শুরু হয় টালবাহানা। টাকা ফেরত না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘবদ্ধ পাওনাদাররা তার বাড়িতে একাধিকবার হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এক সময় নিজ বাড়িতে তিনি অবরম্নদ্ধ হয়ে পড়েন। পাওনাদারদের অব্যাহত চাপের মুখে ডাক্তার চিত্তরঞ্জন প্রামানিক ও তার পুত্র নিত্ত গোপাল প্রামানিক রাতারাতি গা ঢাকা দেয়। তাদের বিরম্নদ্ধে থানা ও আদালতে ডজনখানের মামলা দায়ের করা হয়। সমপ্রতি থানা পুলিশ উপজেলার দেলুয়াবাড়ী এলাকা থেকে কথিত ডাক্তার চিত্তরঞ্জনকে গ্রেফতার করে আবারো জেলহাজতে প্রেরন করে। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন, আর পুত্র নিত্য গোপাল পলাতক রয়েছেন। এমতাবস’ায় তার সম্পত্তিসহ বিশাল অট্টালিকাগুলো নিলামে ওঠায় পাওনাদাররা হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রসঙ্গত: উপজেলার মেরম্নল্যা গ্রামের শাহজাহান আলী মোল্যার মেয়ে রূপালি বিবি দোসতী গ্রামের ডাঃ জান মোহাম্মদের ছেলে স্বামী আজিজার রহমান তোতার বাড়িতে ফিরে যেতে শনিবার সকাল থেকে স্বামীর বাড়ির দরজায় অনশন শুরম্ন করে। গৃহবধূ রূপালি এর আগে স’ানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে মামলা করলেও স্বামী তোতা সেখানে হাজির না হওয়ায় সে অনশন করার সিদ্ধানত নেয়।#
আরও পড়ুন...
নওগাঁ সুষ্ঠু আইন শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ ফ্যাসিবাদি স্বৈরাচার প্রতিরোধ, দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, মাদক সিন্ডিকেট, সন্ত্রাসী চিহ্নিতকরণ, সুষ্ঠু আইন শৃঙ্খলা …