7 Kartrik 1431 বঙ্গাব্দ বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / সারাদেশ / ভূমিদস্যুদের হুমকিতে দিশেহারা মানুষ নওগাঁর মহাদেবপুরে অভিনব কায়দায় তফশীল পরিবর্তন করে দোকান ঘর দখলের চেষ্টা

ভূমিদস্যুদের হুমকিতে দিশেহারা মানুষ নওগাঁর মহাদেবপুরে অভিনব কায়দায় তফশীল পরিবর্তন করে দোকান ঘর দখলের চেষ্টা

এনবিএন ডেক্স: নওগাঁর মহাদেবপুরে এক শ্রেণীর ভূমিদস্যুদের তান্ডবে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। দলিলের সামন্য ফাঁক ফোঁকরের সুযোগ পেলেই এরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করা জমির মালিকদের সন্ত্রাসী কায়দায় বেদখল করে জোড় করে জমির দখল নিচ্ছে। এদের অত্যাচার এতই চরম আকার ধারণ করেছে যে, সাধারণ মানুষ তাদের জমির দখল নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। একটি চক্র বিরোধীয় জমি নিজেদের নামে নামমাত্র মূল্যে বায়নানামা করে জমি দখল করছে। বায়নানামা মূলে জমির মালিক হওয়া না গেলেও তারা অবৈধভাবে জমি দখল করে চলেছে। সমপ্রতি উপজেলা সদরের একটি মূল্যবান সম্পত্তি জবর দখলের চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকার দল মত নির্বিশেষে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা সদরের কায়স’পাড়ার মৃত উপেন্দ্রনাথ হোড়ের ছেলে উৎপল কুমার হোড় রবিবার সন্ধ্যায় মহাদেবপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন সংলগ্ন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি অভিযোগ করেন যে, তিনি গত ১২ জুলাই তার মহাদেবপুর মৌজার হাল ১৭৮ নং খতিয়ানের ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ নং দাগে মোট সোয়া সাত শতক জমি চকশ্যামপুর গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ সাহার ছেলে কালিপদ সাহার নিকট বিক্রি করেন। ঐ জমিটি ছিল উপজেলা সদর থেকে কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে একটি আখক্ষেত। রেজিষ্ট্রির আগে সহি সম্পাদন করা দলিলের একটি ফটো কপি করে তিনি সংগ্রহে রাখেন। কিন’ গত ১ নভেম্বর সকালে একদল ভূমিদস্যু তার মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দোকান ঘর সহ জমি দখল করার জন্য গেলে তিনি বিষ্মিত হয়ে পড়েন। এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যুদের সাথে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দেখে তিনি আতংকিত হয়ে পড়েন। তাকে জানানো হয় যে, তার বিক্রি করা দোকান ঘর সহ জমি কেনার জন্য কালিপদ সাহার নিকট থেকে বায়নানামা করেছে ফাজিলপুর নতুনহাট গ্রামের আকবর আলীর ছেলে সেকেন্দার আলী বাবু ও নাটশাল গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে ইব্রাহীম হোসেন। বিষয়টি নিয়ে সেদিনই সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নিকট বসলে জানা যায় যে, দলিল লেখক মেহেদী হাসানের সাথে যোগসাজসে কালিপদ সম্পাদন করা দলিলের প্রথম পাতা ও তফশীলের পাতা পরিবর্তন করে নতুন করে লিখে সেখানে আগের তফশীলের পরিবর্তে হাল ১৭৫ নং খতিয়ানের ৮১৬ দাগে সোয়া সাত শতক জমি লিখে সেটি রেজিষ্ট্রি করেছে। দাতা উৎপলের প্রতি পাতায় স্বাক্ষর থাকলেও পরিবর্তন করা দুই পাতায় জ্বাল স্বাক্ষর করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে সাথে সাথেই উৎপল জমির ক্রেতা কালিপদ, দলিল লেখক মেহেদী হাসান, বায়না গ্রহিতা সেকেন্দার ও ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। এছাড়া রবিবার নওগাঁ আদলতে বিতর্কিত দলিল রদের একটি মামলা দায়ের করেন। কিন’ অত্যন- প্রভাবশালী প্রতিপক্ষরা তাকে অবিলম্বে তার দোকান ঘর ও জমির দখল ছেড়ে দেবার জন্য হুমকি দিয়েছে। আবার যে কোন সময় তারা জোড় করে সে জমির দখল নিতে পারে বলেও হুমকি দিচ্ছে।
এই ঘটনায় মহাদেবপুরের জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় বিষয়টি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, ইতিপূর্বে বায়নানামা করে উপজেলা সদরের বৃদ্ধ কাজী দেলোয়ার হোসেনের সাড়ে ৯ শতক জায়গা ইব্রাহীম হোসেন গংয়েরা জবর দখল করে। এব্যাপারে আদালতে মামলা দায়ের করা হলে আদালত তাদের উচ্ছেদের রায় দেয়। পরবর্তীতে আপিল আদালতে তা চালু আছে। ইব্রাহীম হোসেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের বড় ভাই এবং অপর বায়না গ্রহিতা সেকেন্দার আলী বাবু থানা বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আককাস আলীর ভাতিজা হলেও তাদের সাথে ১ নভেম্বর দোকান ঘর ও জমির দখল নিতে গিয়ে যারা উপসি’ত থেকে সহযোগিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, থানা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ইউপি’ মেম্বার ও এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ধলু, উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অজিত মন্ডল, থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব ভোদনের ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল হক বকুল সহ আরো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তবে বেশীরভাগ প্রভাবশালী সেখানে যাবার কথা অস্বীকার করেছেন। অজিত মন্ডল জানান, তিনি একটি লোককে ডাকতে সেখানে গিয়েছিলেন। মাহবুবুর রহমান ধলু জানিয়েছেন অন্য কথা। তার মতে সেদিন তারা জমি দখল করতে নয় বরং জমি মাপতে গিয়েছিলেন। এছাড়া জমি বিক্রি করার পরও উৎপল কেন কালিপদকে জমির দখল বুঝে দিচ্ছেনা তা জানতে তিনি অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে গিয়েছিলেন। এব্যাপারে সদর ইউপি’ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান দুলাল জানান, ১ নভেম্বর তার কাছে ইব্রাহীম ও উৎপল উভয় পক্ষই এসেছিলেন। বিতর্কীত দলিলগুলো দেখে পরবর্তীতে সামাজিকভাবে ব্যবস’া নেয়া হবে তিনি সিদ্ধান- দেন। এব্যাপারে কালিপদ জানান, তিনি বাঁশঝাড় কিনেছেন ও বাঁশঝাড়ই বায়নানামা করে দিয়েছেন। তিনি কোন দোকান ঘর কিনেননি বা বায়না করে দেননি বলেও জানান। এব্যাপারে অভিযুক্ত দলিল লেখক মেহেদী হাসান দলিলের পাতা পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করে জানান, নজরুলের সেরেস-া থেকে তাকে ভাড়াটিয়া হিসাবে নিয়ে দলিলটি লিখে নেয়া হয়েছে। বায়না গ্রহিতা ইব্রাহীম হোসেন জানান, তিনি বায়নানামা মূলেই জমির দখল নিতে গিয়েছিলেন। এব্যাপারে মহাদেবপুর থানার ওসি মাহমুদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উৎপলের দেয়া অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি তদন- করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তা মামলা হিসাবে গণ্য হবে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াছাত হায়দার টগর ছাড়াও উৎপল হোড়ের আত্মীয়রা উপসি’ত ছিলেন। সামপ্রতিক সময়ে মহাদেবপুরে অন-ত পাঁচটি জমি ও মার্কেট জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মামলা, পাল্টা মামলা, মারামারি সংঘটিত হয়েছে। বর্তমানের এই জমিকে কেন্দ্র করে মহাদেবপুরের প্রভাবশালীরা বিভক্ত হয়ে পড়ায় যে কোন সময় বড় ধরনের বিবাদের আশংকা করছে উৎপল ও স’ানীয় শানি-প্রিয় জনসাধারণ। ভূমিদস্যুদের হুমকিতে তারা এখন আতংকে দিন কাটাচ্ছে বলেও সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। #

আরও পড়ুন...

নওগাঁর মান্দায় মসজিদের জমি জবর দখলের অভিযোগ

এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁর মান্দায় কাঞ্চন আলোক দিয়ার জামে মসজিদের জমি জবর দখল করে ঘর নির্মাণের …