এনবিএন ডেক্স: বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাসেবায় মানোন্নয়ন ঘটলেও বাংলাদেশের চিত্র এখনো ভিন্ন। এখনো এ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা যায় ক্যানভাসাররা লতা-গুল্ম, শিকড়-বাকল, সাপ-বেজি ও জলজ প্রাণী দিয়ে পশরা সাজিয়ে মুখরোচক কথা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠটিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন বিষয়গুলো দেখেও প্রতিকারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জানা যায়, নওগাঁয় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫০ টি হাটবাজার রয়েছে। ওই হাটবাজারগুলেতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যানভাসাররা এসে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নাকের ডগার উপরে কতিপয় কবিরাজ নিয়মিত চিকিৎসার পসরা বাসিয়ে গরীব রুগিদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া ভাগ্য গননার নামে হাত দেখিয়ে কতিপয় প্রতারক অসহায় মানুষকে জিন্মি করে প্রচুর অর্থ লুটে নিচ্ছে। ক্যানভাসাররা শিশু, নারী কিংবা সহযোগী কোনো শিল্পী দিয়ে প্রথমে গান-বাজনা শুরু করে। ক্যানভাসারদের ভাষায় এটাকে মজমা বলে। গান-বাজনা শোনার জন্য ক্রমেই লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। প্রত্যেক ক্যানভাস দলের দলপতি প্রথমে দর্শক সারিতে বসে থাকে। এক পর্যায় যখন মজমা জমে ওঠে তখন দলপতির আবির্ভাব ঘটে। ভাঙা ভাঙা শুদ্ধ-অশুদ্ধ ইংরেজী-বাংলা মিলিয়ে অবিচলিত কন্ঠে বিচিত্র সব কথাবার্তা দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে ফেলে দলপতি। দলপতির কন্ঠে কিছু অবিশ্বাস্য কথা শুনে মজমার লোকজন আরো শক্ত হয়ে বসে। দেশ-বিদেশের নামকরা ডাক্তার-কবিরাজ-ফকিরদের নাম অবলীলায় বলে তাদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে তার ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে বলে মানুষকে থমকে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু ছবি এবং কাগজপত্র দেখিয়ে দর্শকদের আরো কাছে নিয়ে আসে। আবার ভয়ানক কিছু কর্মকান্ডের মাধ্যমে দর্শকদের তার মজমায় বসিয়ে রাখতে বাধ্য করে। এর মধ্যে কোনো রোগীকে ধরে এনে মাটির মধ্যে মাথা পুঁতে অনেকক্ষণ রেখে দর্শকদের মনে ভীতির সৃষ্টি করে দেয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের চিরায়ত কিছু গোপন কথা বলে উপসি’ত লোকদের আকৃষ্ট করে ফেলে। তাদের ভাষায় এমন কোনো রোগ-বালাই নেই যার চিকিৎসা তার কাছে নেই। এরপর শুরু হয় তার ওষুধ বিক্রির ফন্দি। এখানে কেউ বন-জঙ্গল-লতা-গুল্ম দিয়ে তৈরি পাচন, কেউ আমলকী-হরতকি-বহেরা- সাদা লজাবতি দিয়ে হালুয়া আবার কেউবা সাপ-বেজি এবং গাছের শিকড়-বাকর দিয়ে তাবিজ-কবজ বানিয়ে বিক্রি করছে। কোনো কোনো সময় দেখা যায় ক্যানভাসারদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফেরত আসা রোগীরাও ওষুধ নিচ্ছে। সরজমিন দেখা গেছে, এদের চিকিৎসায় বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো যন্ত্রপানি ব্যবহার করা হচ্ছে না। হাটের দিন রাস্তার পাশে রোগী বসিয়ে বাতের রস বের করার জন্য ব্লেড দিয়ে কেটে শিঙ্গা টানা হচ্ছে। এতে কোনো জীবানুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। পুরোনো ব্লেড, কাঁচি আর ন্যাকড়া দিয়েই কাটাছেড়া করা হচ্ছে। মানুষের গোপন কিছু রোগ-বালাই নিয়াময় করার জন্য হালুয়া মদক বিক্রি করা হচ্ছে। আবার প্রেম-ভালোবাসা সহ স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাবিজ-কবজ বিক্রি করা হছে। রোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মনের বিশ্বাসে ওষুধ খাই, কিছু ফল হয়। এ সম্পর্কে নওগাঁ জেলার সিভিল সার্জন জানান, এ ধরনের চিকিৎসা মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের দেশের লোকজনের মধ্যে শিক্ষার হার কম এবং স্বাস্থ্য সচেতনাও কম। তাই এই সুযোগটা ক্যানভাসাররা নিচ্ছে। তবে এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন...
নওগাঁয় ৯টি ককটেল ১৫ টি সাউন্ড বোমাসহ বিপুল পরিমান জিহাদী বই উদ্ধার- ৬ শিবির নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ
এনবিএন ডেক্সঃ নওগাঁ সদরের শহরস্থ নামাজগড় মাদ্রাসা পাড়া থেকে ৯টি ককটেল, ১৫ টি সাউন্ড বোমা …