নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁতে হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় সপ্তাহ ব্যাপি ধরে হাড় কাঁপুনি শীত নেমেছে। এতে কাঁপছে নওগাঁ অঞ্চলের জনপদ। হিমেল বাতাসের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষের জনজীবন। বিশেষ করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষগুলোর পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। তীব্র শীত থেকে রক্ষা পেতে সকালে পথের ধারে খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে অনেককে এবং শীতবস্ত্রের অভাবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে এসব মানুষরা শীতে অনেকটা কাতর হয়ে পড়েন এবং শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে নিম্ন এবং মধ্যবিত্তরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে। বিশেষ করে ছিন্নমূল এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধরা বিপাকে পড়েছেন। গরম কাপড় না পাওয়ায় শীতে আক্রান্ত হয়ে অনেকে অসুস্থ হয়েও পড়ছে। ফলে বাড়ছে শীতজনিত রোগের মাত্রাও। নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের টেলিফোন অপারেটর রিপন আহম্মেদ বলেন, নওগাঁয় সপ্তাহ ব্যাপি ধরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা একটু বাড়তে থাকে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি দেশের মধ্যে নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এর পর থেকেই নওগাঁয় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে নওগাঁয় সদর হাসপাতালেসহ জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডা জণিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা শীত জনিত কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১০ বেডের পরিবর্তে ভর্তি হচ্ছে দুই/তিন গুণ শিশু রোগী। ঠান্ডায় আক্রান্ত রোগিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালের নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তারা। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। সময় মত কাজে যেতে পারছেন না তারা। সন্ধ্যায় ও ভোরে ঘন কুয়াশায় যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে যানবাহন দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও কষ্টে রয়েছে। প্রতিটি কৃষকের বাড়ী ২ থেকে ৫টি গরু আছে ঠান্ডার করণে গরুর বিভিন্ন রোগের আক্রন্তের আশংকা করছেন কৃষকরা। এছাড়া ঘন কুয়াশায় ও ঠান্ডার কারণে সরিষা সহ সবজি ও ইরি ধানের বীজতলার ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান। তবে কৃষি বিভাগ জানান, ঘন কুয়াশায় ও ঠান্ডার কারণে ফসলের ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে তদারকি করা হচ্ছে এবং কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নওগাঁ শহরের রিক্সা চালক হাতেম, শ্রমিক রমজান জানান, শীতের কারণে কাজ করার কষ্ট হচ্ছে। কয়েক দিন থেকে দুপূরের দিকে একটু সূর্যের দেখা মিললেও সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের ঠান্ডায় তাদের মতো খেটে মানুষরা কাহিল হয়ে পরেছেন। নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা: এবিএম আবু হানিফ জানান, নওগাঁর ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডা জণিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা কম থাকায় রোগিদের সমস্য হলেও চিকিৎসার কোন সমস্য নেই বলে তিনি জানান। নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, অসহায় দুঃস্থ শীতার্ত মানুষের শীত নিবারনের জন্য জেলার তৃণমূল পর্যায় থেকে শীত বস্ত্র বিতরন করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে আরও শীত বস্ত্র আসলে অসহায় দুঃস্থ শীতার্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি শীত বস্ত্র পৌছানো নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান।