5 Boishakh 1431 বঙ্গাব্দ শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ »
Home / জাতীয় সংবাদ / যুদ্ধাপরাধী আলীম মারা গেছেন

যুদ্ধাপরাধী আলীম মারা গেছেন


এনবিএন ডেক্স:
একাত্তরে গণহত্যার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত কারাভোগের শাস্তি ছিল আব্দুল আলীমের, সেই সাজা ভোগ করার মধ্যে বন্দি অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। আদালতের ভাষায় আলীমের ‘জঘন্য অপরাধের’ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হলেও বয়স ও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। গত বছরের ৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর থেকে ৮৪ বছরের আলীম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন ওয়ার্ডে ছিলেন। সেখানেই গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল মজিদ ভূঁইয়া। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারাধ্যক্ষ ফরমান আলী বলেন, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার তাকে আইসিইউতে নিয়ে ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছিল। এই কয়দিন তিনি লাইফ সাপোর্টেই ছিলেন। শনিবার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আলীমের আপিল সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনালে বিচারধীন অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ কে এম ইউসুফের মৃত্যু হলে তার মামলার সেখানেই সমাপ্তি ঘটে। একাত্তরে মুসলিম লীগ নেতা আলীমের বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগের মধ্যে জয়পুরহাটে সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, লুটপাটের নয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ‘রাজাকার নেতা’ হিসেবে পরিচিত স্বাধীনতাবিরোধী এই ব্যক্তি জিয়াউর রহমানের আমলে তার গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা পেয়েছিলেন। বিএনপির টিকিটে পরে একাধিকবার সংসদেও গিয়েছিলেন তিনি। আলীমের মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান। তিনি বলেন, রোববার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে আলীমের পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের আবেদন করেছেন। আলীমের ছেলে খালিদ বিন আলীম বলেন, যেহেতু চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন ক্যান্সারের কারণে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে, তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছি। এখন দেখা যাক কী হয়। লাশ পেলে বনানীতে একটি জানাজা করে জয়পুরহাট নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি। কারাগারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলীম দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তবে আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। এ জন্য উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের নেতা হিসাবে একাত্তরে জয়পুরহাটে রাজাকার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক নিধনযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ আসার পর ২০১২ সালের ১১ জুন তার বিচার শুরু হয়। তার আগে ওই বছরের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আলীমকে। বয়স বিবেচনায় কয়েকটি শর্তে জামিনে ছেলের বাসায় ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অষ্টম রায়ে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর আলীমের সাজা হয়। তখন জামিন বাতিল করে তাকে কারা হেফাজতে নেয়া হয়। ১৯৩০ সালের ১ নভেম্বর জয়পুরহাটে জন্ম আলীমের। তার বাবা আবদুল ওয়াহেদ ছিলেন জয়পুরহাট শহরের থানা রোডের ইসলামিয়া রাইস মিলের মালিক। আদি বসত পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় হলেও দেশবিভাগের পর ১৯৫০-৫১ সালে তাদের পুরো পরিবার তখনকার পূর্ব বাংলার (পাকিস্তান) জয়পুরহাটে চলে আসে। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর আইন পেশায় যোগ দেন আলীম। ১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেয়ার চার বছরের মাথায় দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, আলীম তখন কনভেনশন মুসলিম লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং বগুড়া জেলা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। সে সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মহুকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল আলীমের বিরুদ্ধে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর এবং ১৯৭৭ সালে দুই দফা জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলীম। ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমানের সরকারে প্রথমে বস্ত্রমন্ত্রী এবং পরে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন আলীম।

আরও পড়ুন...

নওগাঁয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম প্রয়ান দিবস পালিত হয়েছে

এনবিএন ডেক্সঃ জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ নওগাঁ জেলা শাখার উদ্যোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল …