সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাক্ষরিত পত্রে ২ হাজার টাকা সম্মানীভাতা পাওয়ার পর দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার বরইতলী গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দীনের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনের ভাগ্যে এখন পর্যন- কোনো মুক্তিযোদ্ধা ভাতা জোটেনি। একাধিকবার ভাতাপ্রাপ্তির জন্য আবেদন করেও কোনো লাভ না হওয়ায় বর্তমানে এই পরিবারটি অনাহারে অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে ভাতার জন্য সুপারিশ করলেও তা এখন পর্যন- কার্যকর করা হয়নি। গ্রামবাসী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দীনের পরিবারের সূত্র থেকে জানা গেছে, স্বাধীনতার যুদ্ধের পূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার বরইতলী গ্রামের মনোয়ারা খাতুন বিয়ের পর চাকরী করার সুবাদে তার স্বামী জসিমউদ্দীনের সঙ্গে খুলনা জেলার মহিশালী গ্রামে বসবাস শুরু করে। জসিম খুলনা আলিম জুটমিলে (ফুলতলা) মেকানিক্স পদে কর্মরত ছিল। খুলনায় থাকাকালীন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জসিমউদ্দীন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় কিশোরী মনোয়ারা স্থানীয় রেশমী নামে এক হিজরার বাসায় ভাড়া থাকতো। মে মাসের ৩ তারিখে মনোয়ারা সহযোদ্ধাদের মুখে জানতে পারেন, তার স্বামী পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এ খবর পাওয়ার পর সে পৈত্রিক বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে আসার জন্য সিদ্ধান- গ্রহণ করে। সুশ্রী চেহারা এবং বিহারীদের (পাকিস্তানীদের) মতো শরীরের গঠন হওয়ায় পাকিস্তানী পোশাক পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। চারদিন চার রাত পায়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থানে স্বল্পসময়ের বিশ্রাম নিয়ে নান প্রতিকূলতার শিকার হয়ে খুলনা থেকে কাজিপুরে চলে আসেন মনোয়ারা। বাড়িতে আসার ৩দিন পর দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মনোয়ারা খাতুন তৎকালীন আওয়ামীলীগের বলিষ্ঠনেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সহযোগিতায় সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে স্বাক্ষাত করেন। কিছুদিন পর শেখ মুজিব স্বহস্থে স্বাক্ষরিত (স্মারক নং পত্রাক-৬/৪/৭২/সিডি/১৯২৭) তারিখ ২১/১১ পত্রে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সাহায্যে হিসেবে ২ হাজার টাকার চেক তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করা হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে এটিই তার জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বোচ্চ পাওয়া। এরপর সে আর কোনো ভাতা পাননি। বর্তমানে বৃদ্ধা এই মহিলা অর্ধাহারে অনাহারে জীবনযাপন করছেন। কথা হয় মনোয়ারা খাতুনের সঙ্গে, তিনি অশ্রুসজল চোখে তার দীর্ঘ বর্ণনায় জানান, ‘৪০ বছর ধরে শেখ মুজিবের স্বাক্ষর করা পত্রটি বয়ে বেড়াচ্ছি। স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে যখন সাক্ষাৎ করেছিলাম, তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, চিন-া করো না, দেশের জন্য তোমার স্বামী জীবন দিয়েছে, তাকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না। দোয়া করি তুমি সুখী হও। তারপর সে নিজে স্বাক্ষর করা এক পত্রে আমাকে ২ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়। এই টাকা পাওয়ার পর পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য আমি কত বারইনা দরখাস- করছি, কোনো লাভ হয় নাই। যেখানে শেখ মুজিব আমাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে মূল্যায়ন করলো, পরবর্তীতে তার লোকজনেরা আমাকে মূল্যায়ন করলো না। তাহলে কি আমার স্বামীর কোনো অবদান নাই? আমি অনাহারে অর্ধাহারে জীবনযাপন করছি। দেখার কেউ নেই। যদি কোনো রকম সাহায্যে পাইতাম বাকী জীবনটা স্বাচ্ছন্দে কাটাতে পারতাম।’ কাজিপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান জানান, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এই পরিবারটি বর্তমানে অসহায় জীবনযাপন করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেখানে লিখিতভাবে তাকে সম্মানীভাতা ২ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, তারপরে তাকে অস্বচ্ছল পরিবার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেয়া উচিত ছিল। পরিবারটির এখন উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি নেই। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্যে দেয়া হয়েছে। তাকে ভাতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমি নিজেও সুপারিশ করেছি।
আরও পড়ুন...
বে-সরকারী সংস্থার উদ্যোগে নওগাঁয় স্বামী কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সম্পা এখন সুস্থ্য
এনবিএন ডেক্স : স্বামী কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সম্পাকে দীর্ঘদিন ঢাকায় বার্ণ হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ্য …